ভারতের ভূ–প্রকৃতি
- ভূ–প্রাকৃতিক বিভাগ :- ভূতাত্ত্বিক গঠন ও ভূমিরূপের বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভারতকে পাঁচটি ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়, যথা –
i) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল
ii) বৃহৎ সমভূমি অঞ্চল
iii) উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল
iv) উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল
v) দ্বীপ অঞ্চল
- প্রস্থ বরাবর হিমালয়ের শ্রেণি বিভাগ করো ।
অথবা, প্রস্থ বরাবর হিমালয়ের ভূপ্রকৃতি বর্ণনা করো ।
অথবা, হিমালয়ের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত পর্বত শ্রেণিগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো ।
উঃ – প্রস্থ বরাবর হিমালয়ের শ্রেণি বিভাগ – পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয়ে প্রস্থ বরাবর উত্তর-দক্ষিণে চারটি সমান্তরাল পর্বত শ্রেণি রয়েছে । যথা –
i) টেথিস হিমালয় বা ট্রান্স হিমালয়
ii) হিমাদ্রি হিমালয় বা উচ্চ হিমালয়
iii) হিমাচল বা মধ্য হিমালয় বা অব হিমালয়
iv) শিবালিক বা বহিঃহিমালয়
i) টেথিস হিমালয় বা ট্রান্স হিমালয় :-
a) অবস্থান– জম্বু ও কাশ্মীর রাজ্যে অবস্থিত । অধিকাংশই তিব্বতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় একে তিব্বত হিমালয় বলে ।
b) উৎপত্তি– প্রথমবার ভূ-আলোড়নে (7-12 কোটি বছর আগে) উৎপত্তি হয় ।
c) প্রস্থ–পর্বত শ্রেণিটি প্রায় 40 কিমি চওড়া ।
d) উচ্চতা–গড় উচ্চতা প্রায় 4000 মিটার ।
e) বৈশিষ্ট্য – এটি পর্বত ও মালভূমিময় । জাস্কর (সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লিওপারগেল 7420 মিটার, লাদাখ, কৈলাস, কারাকোরাম ও আগিল এবং আকসাইচিন মালভূমি আছে ।
ii) হিমাদ্রি হিমালয় বা উচ্চ হিমালয় :-
a) অবস্থান– টেথিস হিমালয়ের দক্ষিণে হিমাচলের উত্তরে অবস্থিত । নেপালে ভারত মহাসাগর লেখ নামে পরিচিত ।
b) উৎপত্তি – টেথিস হিমালয়ের সঙ্গে প্রথমবার ভূ-আলোড়নে উৎপত্তি হয় ।
c) বিস্তার – এটি হিমালয়ের উচ্চতম অংশ, গড় উচ্চতা 6100 মিটার, নাঙ্গা পর্বত থেকে নামচাবারওয়া পর্যন্ত 2400 কিমি দীর্ঘ এবং 25 কিমি প্রশস্ত ।
d) বৈশিষ্ট্য –
♦ অসংখ্য তুষার বৃত সুউচ্চ শৃঙ্গ আছে । যথা – মাউন্ট এভারেস্ট (বিশ্বের উচ্চতম), কাঞ্চন জঙ্ঘা (তৃতীয় উচ্চতম), লোটসে, মানাসুল, মাকুল, চোওয়া, ধওলাগিরি, অন্নপূর্ণা, কেদারনাথ, কামেট, নন্দাদেবী।
♦ এখানে বেশকিছু গিরি পথ আছে – বুর্জিলা, (শ্রীনগর ও লে) জেলেপলা, নাথুলা (সিকিম ও চুম্বি), সিপকি লা ।
iii) হিমাচল বা মধ্য হিমালয় :-
a) অবস্থান – হিমাদ্রির দক্ষিণে ও শিবালিকের উত্তরে অবস্থিত ।
b) উৎপত্তি – দ্বিতীয়বার ভূ-আলোড়নের ফলে (2-3 কোটি বছর) উৎপত্তি হয় ।
c) বিস্তার–উচ্চতা মাঝারি গড়ে 3500-6500 মিটার। এটি 60-80 কিমি প্রশস্ত ।
d) বৈশিষ্ট্য –
♦ অনেক পর্বত শ্রেণি আছে । যথা – পিরপাঞ্জল, ধাওলাধর, মুসৌরি, নাগটিব্বা, মহাভারত (লেখ)
♦ অনেক গিরি পথ আছে । যথা – পিরপাঞ্জল (শ্রীনগর ও জম্বু) বানিহাল বা জওহর টানেল (এশিয়ার দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ), বিডিল, গোলাবঘর ।
♦ শিবালিক ও হিমাচলের অনেক সমান্তরাল ও চওড়া উপত্যকা আছে । যথা – কাশ্মীর, কুলু-কাংড়া।
iv) শিবালিক বা অব হিমালয় :-
a) অবস্থান – এটি হিমালয়ের দক্ষিণতম শ্রেণি । নেপালে চুরিয়া মুরিয়া নামে পরিচিত ।
b) উৎপত্তি – তৃতীয়বার ভূ-আলোড়নে ।
c) বিস্তার – হিমাচলের সমান্তরালে 2400 কিমি দীর্ঘ খুব সংকীর্ণ 15-60 কিমি প্রশস্ত এবং উচ্চতা 600-1500 মিটার ।
d) বৈশিষ্ট্য – দক্ষিণ দিকে খুব খাঁড়া ও উত্তর দিকে ক্রমশ ঢালু হয়ে উপত্যকা সৃষ্টি হয়েছে, যাকে পশ্চিম হিমালয়ে দুন ও পূর্ব হিমালয়ে দুয়াব বলে । দেরাদুন, চৌখাম্বা, কোটা, পাটলি, চুম্বি উপত্যকা ।