বায়ুর চাপবলয় ও বায়ুপ্রবাহ
- ‘The Doctor’ নামে পরিচিত বায়ুপ্রবাহ – হারমাট্টান ।
- সমুদ্র পৃষ্ঠের বায়ুচাপ হল – 1013.25 মিলিবার ।
- বায়ুর আর্দ্রতা মাপার যন্ত্রের নাম – হাইগ্রোমিটার ।
- বানিজ্য বায়ু বলে – আয়ন বায়ুকে ।
- সবচেয়ে বিধ্বংসী ঝড় – টর্নেডো ।
- তুষার ভক্ষক বলা হয় – চিনুক ।
- চিন সাগরের ঘুর্নবাতকে বলে – টাইফুন ।
- ক্যারিবিয়ান সাগরের ঘুর্নিঝড় হল – হ্যারিকেন ।
- বায়ুর চাপ মাপার একক – মিলিবার ।
- তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ষাট – 60° দঃ অক্ষরেখা বরাবর তীক্ষ্ণ শব্দে প্রবাহিত পশ্চিমা বায়ুকে তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ষাট বলে ।
- অশ্ব অক্ষাংশ বলা হয় – 35° উত্তর অক্ষাংশটিকে ।
- বঙ্গোপসাগরের ঝড়কে বলা হয় – সাইক্লোন ।
- পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার ঝড়কে বলা হয় – উইলি – উইলি ।
- ভারত মহাসাগরের ঝড়কে বলা হয় – সাইক্লোন ।
- হ্যাডলির কক্ষ – 0° – 30° অক্ষাংশ ।
- ফেরেল কক্ষ – 30° – 60° অক্ষাংশ ।
- মেরু কক্ষ – 60° – 90° অক্ষাংশ ।
- জেট বায়ু – 15° – 35° অক্ষাংশ ।
- গর্জনশীল চল্লিশার নাম – 40° দঃ অক্ষাংশ ।
- সাময়িক বায়ুকে বলা হয় – মৌসুমি বায়ু ।
- স্থানীয় বায়ু – বোরা, চিনুক, লু, আঁধি ।
- আকস্মিক বায়ু – হ্যারিকেন ।
- রসবি তরঙ্গ – 1930 খ্রিষ্টাব্দে সি. জি. রসবি আবিষ্কার করেন ।
- অক্লুসান – নাতিশীতোষ্ণ ঘুর্নবাতের অন্তিম পর্যায় ।
- সাইক্লোন কথার অর্থ – সাপের কুণ্ডলী ।
- অ্যাজোরস উচ্চচাপ – উঃ আটলান্টিকের পুর্বাঞ্চলে উষ্ণমণ্ডলীয় প্রতীপ ঘূর্ণবাত ।
- ঘুর্নবাত ও প্রতীপ ঘুর্নবাতের মধ্যে পার্থক্য লেখ ?
উঃ – ঘুর্নবাত ও প্রতীপ ঘুর্নবাতের মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় | ঘুর্নবাত | প্রতীপ ঘূর্নবাত |
i) কেন্দ্রের চাপ | কেন্দ্রে থাকে নিম্নচাপ । | কেন্দ্রে থাকে উচ্চচাপ । |
ii) গমনের দিক | এর বায়ু ঊর্ধ্বগামী । | এর বায়ু নিম্নগামী । |
iii) বাঁকের দিক | উত্তর গোলার্ধে বাঁদিকে এবং দক্ষিন গোলার্ধে ডানদিকে । | উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিন গোলার্ধে বামদিকে । |
iv) গতিবেগ | গতিবেগ খুব বেশি । | গতিবেগ কম । |
v) মেঘাচ্ছন্নতা | আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে । | আকাশ মেঘমুক্ত থাকে । |
vi) বিস্তৃতি | এর বিস্তৃতি কম । | এর বিস্তৃতি বেশি । |
vii) সংঘটন ঋতু | সাধারানত গ্রীষ্মকালে দেখা যায় । | সাধারানত শীতকালে দেখা যায় । |
viii) প্রভাব ও স্থায়িত্ব | বিধ্বংসী কিন্তু স্বল্প স্থায়ী । | বিধ্বংসী নয় তবে দীর্ঘস্থায়ী । |
চিত্র :–
- পার্বত্য বায়ু বা ক্যাটাবেটিক বায়ু ও উপত্যকা বায়ু বা অ্যানাবেটিক বায়ুর মধ্যে পার্থক্য লেখ ?
উঃ –
বিষয় | পার্বত্য বায়ু | উপত্যকা বায়ু |
i)সংঞ্জা | পার্বত্য শান্ত আবহাওয়া রাতের বেলায় পর্বতের চাল বেয়ে নিম্নগামী ঠাণ্ডা ও ভারী বায়ুকে পার্বত্য বায়ু বলে । | পার্বত্য শান্ত আবহাওয়া দিনের বেলায় পর্বতের ঢাল বেয়ে ঊর্ধ্বগামী উষ্ণ ও হালকা বায়ুকে উপত্যকা বলে । |
ii) সময়কাল | সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত । | সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত । |
iii) প্রকৃতি | নিম্নগামী শীতল ও ভারী বায়ু । | ঊর্ধ্বগামী উষ্ণ ও হালকা বায়ু । |
iv) গতিবেগ | বেশি ও ভোরে সর্বোচ্চ হয় । | কম ও দুপুরে সর্বোচ্চ হয় । |
v) চিত্র | ![]() |
![]() |
- বায়ুচাপের তারতম্যের নিয়ন্ত্রকগুলী কী ?
উঃ – বায়ুচাপের তারতম্যের জন্য দায়ী প্রধান পাঁচটি কারন হল –
i) উচ্চতা :– বায়ুর উচ্চতার সঙ্গে বায়ু চাপের ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্ক বিদ্যমান । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 274 – 300 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে 1 ইঞ্চি বা 34 মিলিবার হারে বায়ুচাপ হ্রাস পায় । এজন্য সমভূমির তুলনায় পর্বতের বায়ুচাপ কম ।
ii) উষ্ণতা :– বায়ুর উষ্ণতার সঙ্গে বায়ু চাপের ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্ক আছে । উষ্ণতা বাড়লে বায়ুর চাপ কমে এবং উষ্ণতা কমলে বায়ুচাপ বাড়ে ।
iii) জলীয় বাষ্প :– বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাপের সঙ্গে বায়ুচাপের বিপরীত সম্পর্ক দেখা যায় । আর্দ্র বায়ুর চাপ কম এবং শুষ্ক বায়ুর চাপ বেশি হয় ।
iv) পৃথিবীর আবর্তন :– পৃথিবী নিজ অক্ষের ওপর পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে সবসময় ঘুরছে । সেজন্য পৃথিবী পৃষ্ঠে সৃষ্ট ঘূর্ননজনিত বল ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য সৃষ্ট কেন্দ্রাতিক বল বায়ুমন্ডলের চাপকে প্রভাবিত করে ।
v) স্থলভাগ ও জলভাগ বণ্টন :– জলভাগ ও স্থলভাগের তাপ গ্রহীতা শক্তির পার্থক্যের জন্য বায়ুচাপের তারতম্য হয় ।
- মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেটবায়ুর সম্পর্ক লেখ ?
উঃ – মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেটবায়ুর সম্পর্ক :– মৌসুমি জলবায়ুর ওপর জেট বায়ুর অপরিসীম প্রভাব রয়েছে । মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ, মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের ঋতু পরিবর্তন, শীতকাল এবং গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব ও তীব্রতা, বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত প্রভৃতি বিষয় জেট বায়ুর গতি প্রকৃতি ও অবস্থানের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করে । এপ্রিল – মে মাসে দুই ধরনের জেট বায়ু মৌসুমি বায়ুপ্রবাহকে নিয়ন্ত্রন করে । যেমন –
i) ক্রান্তীয় পুবালি জেট বায়ু :– জুন মাসে পূর্বদিক থেকে এই প্রবাহটি চিনের দক্ষিন উপকুল থেকে শুরু করে 9 – 12 km উচ্চতায় পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে, 12° – 15° উঃ অক্ষাংশ বরাবর থাইল্যান্ড ও ভারতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আফ্রিকা মহাদেশের সাহারা মরুভূমিতে গিয়ে শেষ হয় ।
ii) উপক্রান্তীয় পশ্চিমি জেট বায়ু :– উত্তর ভারতে 20° থেকে 24° অক্ষাংশ বরাবর 9-12 km উচ্চতায় পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত এই জেট বায়ুটি অক্টোবর – নভেম্বর মাসে দক্ষিন – পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনের পর ভারতের ওপর সক্রিয় হয় ।
- স্থানীয় বায়ু কাকে বলে ?
উঃ – বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর নির্দিষ্ট অঞ্চলে স্থানীয় কারনে স্বল্প পরিসর অঞ্চলে যেসব বায়ু প্রবাহিত হয়, তাদের স্থানীয় বায়ু বলে । এগুলি দুই ধরনের হয় – উষ্ণ ও শীতল ।
উষ্ণ স্থানীয় বায়ু :–
- ফন – আল্পস পর্বতমালা
- চিনুক – প্রেইরি তৃণভূমি
- খামসিন – মিশর ও আরব
- হারমাট্টান –গিনি উপকূল
- সিরক্কো – ইতালি
- লেভেচ –স্পেন
- সিমুম – সাহারা
- লু – উত্তর-পূর্ব ভারত
- আঁধি – রাজস্থান
- সান্টানা – ক্যালিফরনিয়া
শীতল স্থানীয় বায়ু :–
- মিস্ট্রাল – ফ্রান্স
- বোরা – ইটালি
- পম্পেরো – পম্পাস
- টাকু – আলাস্কা তৃণভূমি
- জোন্ডা – আর্জেন্টিনা
- বার্গ – দক্ষিণ আফ্রিকা
- কারাবুরান – কাজাকিস্তান
- ল্যাভেন্টার – স্পেন
- পুগা – রাশিয়া
- জলবায়ুগত মরুদ্যান বলা হয় – সুইজারল্যান্ডকে ।
- লু লাগা – লু একপ্রকার তাপ প্রবাহ । উষ্ণতা 45°C – 50°C হয় । শরীরের তাপ অত্যন্ত বেড়ে যায়, একে লু লাগা বলে । এর প্রভাবে প্রতিবছর বহু মানুষ ও গবাদি পশু মারা যায় ।
- ঘূর্নবাতের চক্ষু – ক্রান্তীয় শক্তিশালী ঘূর্নবাতের কেন্দ্র থেকে 10 – 20 km ব্যাসের বৃত্তাকৃতি অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠে বায়ু গতিহীন, শান্ত এবং আকাশ মেঘ মুক্ত নির্মল ও বৃষ্টিহীন থাকে, একে ঘূর্নবাতের চক্ষু বলে ।
- বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ক্রান্তীয় ঘূর্নবাত :–
ঘূর্নবাত | দেশ | উৎপত্তিস্থল |
টর্নেডো | যুক্তরাষ্ট্র | মেক্সিকো উপসাগর |
টাইফুন | চিন, জাপান | দক্ষিন চিন সাগর |
হ্যারিকেন | ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ক্যারিবিয়ান সাগর |
তাইফু | জাপান, তাইওয়ান | জাপান সাগর |
ব্যাগুই | ফিলিপাইন্স | উত্তর ভারত মহাসাগর |
উইলি উইলি | অস্ট্রেলিয়া | দক্ষিন – পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর |
সাইক্লোন | ভারত, বাংলাদেশ | বঙ্গোপসাগর, আরবসাগর |
- চিত্রের সাহায্যে ভূপৃষ্ঠের বায়ুর চাপবলয় গুলির অবস্থান ও উৎপত্তির কারন বর্ননা কর ?
উঃ – বায়ুচাপের তারতম্য অনুসারে ভূপৃষ্ঠে 7 টি বায়ুচাপ বলয় দেখা যায় । এগুলি হল –
i) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় :–
অবস্থান :– নিরক্ষরেখার দুই পাশে 5° -10° অক্ষাংশের মাঝে অবস্থিত ।
উৎপত্তির কারন :–
i) সারাবছর লম্বভাবে পর্যাপ্ত সূর্যকিরণের জন্য উষ্ণ বায়ু হালকা হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয় ।
ii) এখানে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ বেশি থাকায় জলীয় বাষ্পের পরিমান বৃদ্ধি পায় বলে বায়ু আর্দ্র ও হালকা হয় ।
iii) পৃথিবীর আবর্তনের প্রভাব এখানে সর্বাধিক হওয়ায় বায়ু প্রবাহ সর্বদা ঊর্ধ্বমুখী হয় ও অনুভূমিক প্রবাহ বোঝা যায় না । বায়ুমণ্ডলে সর্বদা শান্তভাবে বিরাজ করে তাই অঞ্চলটিকে নিরক্ষীয় শান্ত বলয় বা ডোলড্রামস বলে ।
ii) ও iii) কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় :–
অবস্থান :– উভয় গোলার্ধে 25° – 35° উত্তর ও দক্ষিন অক্ষাংশে এই উচ্চচাপ বলয় দুটি সৃষ্টি হয়েছে ।
উৎপত্তির কারন :–
i) নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে বিক্ষিপ্ত উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু 5 কিমি উচ্চতায় ক্রমশ প্রসারিত, শীতল ও ভারী হয়ে এই অঞ্চলে অবতারন করে ।
ii) দুই মেরু বৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চল থেকে কোরিওলিস বলের প্রভাবে ঠাণ্ডা ও ভারী বায়ু বিক্ষিপ্ত হয়ে এই অঞ্চলে নেমে এসে বায়ুর পরিমাপ বৃদ্ধি পায়, ফলে বায়ুচাপ বেড়ে যায় ।
iii) ও iv) সুমেরু ও কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় :–
অবস্থান :– উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের 60° – 70° অক্ষাংশের মধ্যে এই নিম্নচাপ বলয় দেখা যায়।
উৎপত্তির কারন :–
i) ক্রান্তীয় অঞ্চল অপেক্ষা এখানে কোরিওলিস বল অধিক হওয়ায় বায়ু বিক্ষিপ্ত হয় ।
ii) দুই মেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল শুষ্ক বায়ু এখানে পৌঁছে ক্রান্তীয় উষ্ণ বায়ুর সঙ্গে সংঘর্ষে ঊর্ধ্বমুখী হয় । ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে কোনো বায়ুপ্রবাহ থাকে না তাই একে মেরু বৃত্ত প্রদেশীয় শান্তবলয় বলা হয় ।
vi) ও vii) সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় :–
অবস্থান :– উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে 80° – 90° অক্ষাংশের এই উচ্চচাপ বলয় লক্ষ্য করা যায় ।
উৎপত্তির কারন :–
i) সারাবছর মেরু অঞ্চলে তির্যক রশ্মির জন্য উষ্ণতা হিমাঙ্কের বহু নিচে থাকে । বায়ু অত্যন্ত শীতল ও ভারী হয় ।
ii) তির্যক সূর্যরশ্মি জমাটবদ্ধ সমুদ্রের জন্য বাষ্পীভবন হার খুব কম, ফলে বায়ু বাষ্পহীন শূস্ক ।
- বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে ? একে কয়ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ব্যাখ্যা কর ?
উঃ – বায়ুপ্রবাহ :– ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে সমান্তরালে অর্থাৎ অনুভূমিক ভাবে উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে বায়ুর চলাচলকে বায়ুপ্রবাহ বলে ।
শ্রেণিবিভাগ :– উৎপত্তি, বৈশিষ্ট্য ও গতিপ্রকৃতি অনুসারে বায়ুপ্রবাহ চার প্রকার ।
যথা – i) নিয়ত বায়ু
ii) সাময়িক বায়ু
iii) স্থানীয় বায়ু
iv) আকস্মিক বায়ু
i) নিয়ত বায়ু :– স্থায়ী চাপবলয়গুলির সঙ্গে তাল রেখে যেসব বায়ু সারাবছর ধরে নিয়মিত ভাবে নির্দিষ্ট পথে নির্দিষ্ট দিকে ও গতিবেগে প্রবাহিত হয়, তাদের নিয়ত বায়ু বলে । এই বায়ুকে 3 ভাগে ভাগ করা হয় । যথা –
a) আয়ন বায়ু :– কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত নিয়ত বায়ুকে আয়ন বায়ু বলে । এই বায়ুকে বানিজ্য বায়ু ও পুবালি বায়ু বলা হয় । দুই গোলার্ধে দুটি আয়ন বায়ু আছে । যথা – উত্তর পূর্ব আয়ন বায়ু, দক্ষিনপূর্ব আয়ন বায়ু । ( 5° – 35° অক্ষাংশ)
b) পশ্চিমা বায়ু :– কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরু ও কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত নিয়ত বায়ুকে পশ্চিমা বায়ু বলে । এই বায়ুকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় ।
যথা- দক্ষিন – পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু ও উত্তর – পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু । ( 35° – 60° অক্ষাংশ)
দক্ষিন গোলার্ধে 40° – 60° অক্ষাংশে জলভাগের বিস্তার বেশি হওয়ায় উত্তর – পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু বিনা বাধায় প্রবল বেগে তীক্ষ্ণ শব্দ করে প্রবাহিত হয় । একে সাহসী পশ্চিমা বায়ু বলে ।
এই বায়ু প্রবাহিত অক্ষরেখাগুলি বিভিন্ন নামে পরিচিত । 40° দক্ষিন অক্ষরেখা গর্জনশীল চল্লিশা, 50° দক্ষিন অক্ষরেখা ক্রোধোন্মত্ত পঞ্চাশ, 60° দক্ষিন অক্ষরেখা তীক্ষ্ণ চিৎকারকারী ষাট ।
c) মেরু বায়ু :– সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরু ও কুমেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত নিয়ত বায়ুকে মেরু বায়ু বলে । ( 70° – 80° অক্ষাংশ)। এটি দুই প্রকারের । যেমন – উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু ও দক্ষিন পূর্ব মেরু বায়ু ।
ii) সাময়িক বায়ু :– দিন বা রাতের বিশেষ সময়ে কিংবা বছরের বিশেষ ঋতুতে বায়ুচাপের তারতম্যে যে বায়ু সাময়িকভাবে প্রবাহিত হয় তাকে সাময়িক বায়ু বলে। এই বায়ু পাঁচ প্রকারের হয়। যথা –
a) স্থলবায়ু :– রাতের বেলায় উপকূল অঞ্চলে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে স্থলবায়ু বলে ।
b) সমুদ্র বায়ু :– দিনের বেলায় উপকূল অঞ্চলে জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে যে শীতল সাময়িক বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে সমুদ্র বায়ু বলে ।
c) মৌসুমি বায়ু :– শীত ও গ্রীষ্ম ঋতুভেদে বিপরীত দিক থেকে সুবৃহৎ অঞ্চল জুড়ে নিয়মিতভাবে প্রবাহিত সাময়িক বায়ুকে মৌসুমি বায়ু বলে ।
d) পার্বত্য বায়ু :– পার্বত্য শান্ত আবহাওয়ায় রাতের বেলায় পর্বতের ঢাল বেয়ে নিম্নগামী ঠাণ্ডা ও ভারী বায়ুকে পার্বত্য বায়ু বলে ।
e) উপত্যকা বায়ু :– পার্বত্য শান্ত আবহাওয়ায় দিনের বেলায় পর্বতের ঢাল বেয়ে ঊর্ধ্বগামী উষ্ণ ও হালকা বায়ুকে উপত্যকা বায়ু বলে ।
iii) স্থানীয় বায়ু :– বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর নির্দিষ্ট অঞ্চলে স্থানীয় কারনে স্বল্প পরিসর অঞ্চলে যেসব বায়ু প্রবাহিত হয়, তাদের স্থানীয় বায়ু বলে । এইগুলি দুই ধরনের হয় – উষ্ণ ও শীতল ।
- উষ্ণ স্থানীয় বায়ু :– ফন, চিনুক, খামসিন, হারমাট্টান, সিরোক্কো, লেভেচ, সিমুম, লু, আন্ধি, সান্টানা প্রভৃতি ।
- শীতল স্থানীয় বায়ু : – মিস্ট্রোল, বোরা, পম্পেরো, টীকু, জোন্ডা, বার্গ, কারাবুরান, লাভেন্টার ও পুবা প্রভৃতি।
iv) আকস্মিক বায়ু :– স্বল্প পরিসর এলাকার চাপের তারতম্যের জন্য অনিয়মিতভাবে হটাৎ যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাদের আকস্মিক বায়ু বলে । এগুলি দুই ধরনের । যথা –
a) ঘূর্নবাত :– ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোস্ন মণ্ডলে নিম্নচাপ কক্ষকে বেষ্টন করে কুন্ডলীর মতো পাক খেয়ে কেন্দ্রমুখী ও ঊর্ধ্বগামী দ্রুত গতিসম্পন্ন উষ্ণ ঘুর্নি বায়ুপ্রবাহকে ঘূর্নবাত বলে । হেনরি পিডিংটন ঘূর্নবাত শব্দটির প্রচলন করেন ।
b) প্রতীপ ঘূর্নবাত :– শীতল নাতিশীতোষ্ণ ও হিমমন্ডলে উচ্চচাপকে কেন্দ্র করে কুন্ডলীর মতো পাক খেয়ে কেন্দ্র বহির্মুখী ও অধঃগামী ধীর গতিসম্পন্ন শীতল ও শুষ্ক বায়ুপ্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্নবাত বলে । ফ্রান্সিস গলটন প্রথম শব্দটির প্রচলন করেন ।
38) জেট প্রবাহ কাকে বলে ? এর শ্রেনীবিভাগ কর ?
উঃ – জেট প্রবাহ :– যে দীর্ঘ তরঙ্গ বিশিষ্ট শক্তিশালী জিওট্রপিক বায়ু অতি দূরন্ত বেগে উচ্চ ট্রপোস্ফিয়ার 9 -12 km উচ্চতায় সমোষ্ণরেখা সমান্তরালে পশ্চিম-পূর্ব দিকে আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয়, তাকে জেট বায়ু বা জেট স্টিম বলে । 1944 সালে আবহবিদ এম বেকন জেট বিমান চলাচলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে জেট প্রবাহ নামে অভিহিত করেন ।
বৈশিষ্ট :–
i) প্রকৃতি :– জেট প্রবাহগুলি আঁকাবাঁকা দীর্ঘ তরঙ্গ যুক্ত ।
ii) বিস্তার :– প্রস্থ কয়েক শত কিমি, দৈর্ঘ্য কয়েক হাজার কিমি এবং বেগ 2-4 km হয় ।
iii) গতিবেগ :– গতিবেগে ঘণ্টায় 161-322 কিমি ।
iv) প্রবাহ :– সমচাপ রেখার সমান্তরালে জিওট্রপিক বায়ু রূপে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয় । এটি ঊর্ধ্বাংশে পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহ । আঁকাবাঁকা ঢেউ এর মতো প্রবাহ পথে অগ্রসর হয় । এই পথকে রসবিতরঙ্গ বলে ।
শ্রেণীবিভাগ :– অবস্থানের ভিত্তিতে জেটপ্রবাহকে তিনটি প্রধান শ্রেনিতে ভাগ করা হয় ।
যথা –
i) মেরুদেশীয় জেট :– 45° – 60° অক্ষাংশে সারা বছর ধরে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘন্টায় 250-300 কিমি বেগে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয় । এটি সবচেয়ে শক্তিশালী ।
ii) উপক্রান্তীয় জেট :– 25° – 35° অক্ষাংশে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘণ্টায় 300-375 কিমি বেগে সারাবছর ধরে প্রবাহিত হয় ।
iii) ক্রান্তীয় জেট :– 15° – 20° অক্ষাংশে গ্রীষ্মকালে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ঘন্টায় 175-200 কিমি বেগে প্রবাহিত হয় । এটি পুবালি জেট । ভারত ও আফ্রিকা