ভারতের মৃত্তিকা
- মৃত্তিকা সৃষ্টির উপাদান –
Ans. (i) আদি শিলা,
(ii) জলবায়ু,
(iii) ভূ প্রকৃতি,
(iv) সময়,
(v) জৈব পদার্থ |
- খাদার –
Ans. উর্বর নবীন পলিমাটি ।
- ভাঙ্গর (ধাঙ্গর) –
Ans. অনুর্বর প্রাচীন পলিমাটি ।
- ভুর –
Ans. উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির নিম্ন অঞ্চলের বালি মিশ্রিত মৃত্তিকা ।
- কৃষ্ণ মৃত্তিকার অপর নাম –
Ans. রেগুর বা কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা ।
- মরু মৃত্তিকার অপর নাম –
Ans. সিরোজেম ।
- পার্বত্য মৃত্তিকার অপর নাম –
Ans. পডসল ।
- গ্রথন অনুযায়ী পলি মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ –
Ans. দোঁয়াশ, বেলে ও এঁটেল মাটি ।
- হিউমাস –
Ans. মৃত্তিকায় অবস্থিত পরিপূর্ণভাবে বিশ্লিষ্ট জীবদেহ বিশেষ ।
- রেগুর শব্দের উৎপত্তি –
Ans. তেলেগু শব্দ রেগাভা থেকে ।
- ল্যাটেরাইট শব্দের উৎপত্তি –
Ans. ল্যাটিন শব্দ ল্যাটার থেকে । যার অর্থ ইট ।
- পডসল শব্দের উৎপত্তি –
Ans. রুশ শব্দ পডসল থেকে, যার অর্থ ধূসর ।
- ভারতের প্রধান তিন মৃত্তিকা অঞ্চল –
Ans. পাললিক মৃত্তিকা, কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও লোহিত মৃত্তিকা ।
- ভারতের মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্র –
Ans. ভূপালে – IISS – Indian Institute of Soil Science.
- IARI –
Ans. Indian Agricultural Research Institute.
- ICAR –
Ans. Indian council of Agricultural Research.
- মৃত্তিকা সৃষ্টিকারী উপাদানের সমীকরণ –
Ans. রাশিয়া মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ডকুচেভ কৃত মৃত্তিকা সৃষ্টির সমীকরণ হল – S = F (Cl , O, R, P,T), যেখানে S = Soil (মৃত্তিকা), F = Function বা কার্যকারিতা, Cl = Climate বা জলবায়ু, O = Organic Activity বা জীবমন্ডল, R = Relief বা ভূপ্রকৃতি, P = Parent Material বা জনক শিলা, T = time বা সময় ।
- মৃত্তিকা ক্ষয়ের উপাদানের সমীকরণ –
Ans. E = F(Cl, V, T, S, H) অর্থাৎ E = Erosion বা ক্ষয়, F = Function বা কার্যকারিতা, Cl = Cimate বা জলবায়ু, V = Vegatation বা উদ্ভিদ, T = Topography বা ভূমিরূপ, S = Soil Properties বা মৃত্তিকার উপাদান, H = Human Activity বা মানুষের কার্যাবলী ।
- বেট –
Ans. পাঞ্জাবের নবীন পলিমৃত্তিকা অঞ্চল বেট নামে পরিচিত ।
- ধায়া –
Ans. পাঞ্জাবের প্রাচীন পলিমৃত্তিকা অঞ্চল ধায়া নামে পরিচিত।
- রে বা ঊষর বা কালার –
Ans. উত্তর রাজস্থানে শুস্ক অঞ্চলে প্রাপ্ত লবন বা ক্ষারধর্মী অনুর্বর মৃত্তিকা রে নামে পরিচিত ।
- ভাবর –
Ans. পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর প্রদেশে হিমালয়ের পাদদেশে জলাভূমিপূর্ণ সমতল অঞ্চলের পলিমাটি ভাবর নামে পরিচিত ।
- সোলাম শব্দের অর্থ –
Ans. মেঝে বা ভূমি ।
- পেডালফার মৃত্তিকা –
Ans. যে মৃত্তিকায় লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের পরিমান বেশি থাকে এবং যার রং বাদামি, লাল বা হলুদ হয়, তাকে পেডালফার মৃত্তিকা বলে ।
- পেডোক্যাল মৃত্তিকা –
Ans. যে মৃত্তিকায় চুনের ভাগ বেশি ও রং কালো, তাকে পেডোক্যাল মৃত্তিকা বলে ।
- ধাওকার –
Ans. উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমির জলাভূমির মৃত্তিকাকে ধাওকার বলে ।
- ধাপচাষ –
Ans. পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন উচ্চতায় ধাপ কেটে যে চাষ করা হয়, তাকে ধাপচাষ বলে ।
- ঝুমচাষ –
Ans. পাহাড়ের জঙ্গল পুড়িয়ে যে চাষ হয়, তাকে ঝুমচাষ বলে ।
- রিল ক্ষয় বা নালা ক্ষয় –
Ans. শিথিল মৃত্তিকার স্তরের মধ্যে সরু সরু নালার আকারে যে মৃত্তিকা ক্ষয় হয়, তাকে রিল ক্ষয় বা নালা ক্ষয় বলে ।
- অন্তর্ভূমি –
Ans. অবশিষ্ট মৃত্তিকার নীচে অবস্থিত শিলাকে অন্তর্ভূমি বলে ।
- মৃত্তিকা –
Ans. ভূত্বকের ওপরের শিলাচূর্ণ (খনিজ পদার্থ), বিয়োজিত জৈব যৌগ, জীবাণু, জলীয় দ্রবণ, বায়ু প্রভৃতি দ্বারা গঠিত সূক্ষ পদার্থের হালকা ও শিথীল অংশকে মৃত্তিকা বলে ।
- মৃত্তিকার গ্রথন –
Ans. মৃত্তিকার অন্তর্গত খনিজ কণার বিন্যাসকে বলা হয় গ্রথন ।
- ভারতের মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ –
Ans. ছয় ভাগে ভাগ করা হয় । যথা –
(i) পাললিক মৃত্তিকা
(ii) কৃষ্ণ মৃত্তিকা
(iii) লোহিত মৃত্তিকা
(iv) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা
(v) মরু অঞ্চলের মৃত্তিকা
(iv) পার্বত্য অঞ্চলের মৃত্তিকা |
- রেগুর মৃত্তিকা –
Ans. দাক্ষিণাত্যের উত্তর – পশ্চিমাংশে লাভা গঠিত ব্যাসল্ট শিলা থেকে উৎপন্ন যে অতি উর্বর কৃষ্ণ মৃত্তিকা দেখা যায়, স্থানীয় ভাষায় তাকে রেগুর বলে ।
- ব্ল্যাক কটন সয়েল বা কৃষ্ণ মৃত্তিকা –
Ans. কৃষ্ণ মৃত্তিকা কার্পাস বা তুলো চাষের জন্য উপযোগী বলে কৃষ্ণ মৃত্তিকাকে কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা বা Black cotton Sail বলে ।
- সিরোজেম মৃত্তিকা –
Ans. মরুভূমি সংলগ্ন অঞ্চলে ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ ধূসর বর্ণের মৃত্তিকাকে সিরোজেম মৃত্তিকা বলে । এই মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমান বেশ কম ।
- মৃত্তিকা ক্ষয় –
Ans. হিমবাহ, জলস্রোত, সমুদ্রের ঢেউ, বায়ু প্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তি এবং মানুষের নানান রকম অবাঞ্চিত কার্যকলাপের ফলে মাটির ওপরের হালকা অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অপসারিত হলে, তাকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে ।
- শিট ক্ষয় –
Ans. ঢালু জমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলধারার মাধ্যমে মাটির উপরি স্তরের অপসারণ হল শিট ক্ষয় ।
- খোয়াই ক্ষয় –
Ans. ছোটো নালা বড়ো নালাই পরিণত হলে তা হল খোয়াই ক্ষয় ।
- ফালি চাষ –
Ans. যে সকল জমিতে মাটি ক্ষয় বেশি সেখানে ঢালের আড়াআড়ি দিকে চওড়া ফিতের মতো জমি তৈরী করে ক্ষয় রোধকারী শষ্য (সিম, ডাল, সয়াবিন) চাষ করা হয় । এতে মাটির ক্ষয় রোধ হয় এবং মাটির জলধারণ ক্ষমতাও বাড়ে ।
- বধভূমি –
Ans. বৃক্ষহীন, ক্ষয় ও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রিল, গালি, রেভাইন ক্ষয়ের মাধ্যমে অত্যাধিক মাটি ক্ষয়ের ফলে যে উঁচু নিচু ক্ষয়প্রাপ্ত ভূভাগ সৃষ্টি হয়, তাকে বধভূমি বলে । পস্চিম মেদনীপুরের গড়বেতার কাছে গণগণিতে শিলাবতী নদীর তীরে দেখা যায় ।
- ঘুটিং –
Ans. ভাঙ্গরের চুন জাতীয় পদার্থ বেশি থাকলে তাকে ঘুটিং বলে ।
- ল্যাটেরাইট মাটি সম্মন্ধে যা জানো লেখ ।
অথবা,
ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার অবস্থান, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখ ।
Ans. বন্টন ও অবস্থান :- পূর্বঘাট পার্বত্য অঞ্চল, রাজমহল পাহাড়, বিন্ধ্য ও সাতপুরা মালভূমি অঞ্চল, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ঝাড়খন্ড, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমঘাট ও মেঘালয়ের কয়েকটি স্থানে এই মৃত্তিকা দেখা যায় ।
বৈশিষ্ট্য :-
(i) রং :- এই মৃত্তিকায় লৌহ অক্সাইড থাকায় লাল হয় । তবে বাদামি ও হলুদ রঙেরও হতে পারে ।
(ii) গ্রথন :- এই মৃত্তিকাতে শতকরা 40 – 50 ভাগ পলিকণা, 20 – 30 ভাগ বালিকণা ও 10 – 20 ভাগ কাদাকনা থাকে । এই মৃত্তিকায় পলি ও বালি কণার ভাগ বেশি থাকায় এই মৃত্তিকা মাঝারি সূক্ষ গ্রথনযুক্ত হয় ।
(iii) খনিজের উপস্থিতি :- এই মৃত্তিকাতে লোহার পরিমান বেশি । অন্যান্য খনিজ উপাদান কম ।
(iv) উৎপাদিত শষ্য :- লোহিত মৃত্তিকাতে নাইট্রোজেন ও জৈব পদার্থ কম থাকায় এই মৃত্তিকা অনুর্বর । তবে মাটিতে মিলেট, বাদাম, ভুট্টা, সয়াবিন, আঙুর ও কফি উৎপাদনে বেশি উপযোগী ।
গুরুত্ব :- এই মৃত্তিকা অনুর্বর বলে কৃষিকাজে সহায়ক নয় । তবে জলসেচ ও সার প্রয়োগের মাধ্যমে এই মাটিতে চা, কফি, রাবার ও বাদামের চাষ হয় । গ্রাম অঞ্চলে রাস্তাঘাট নির্মাণে ব্যবহৃত হয় ।
- ভারতের রেগুর মৃত্তিকার অবস্থান, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লেখ ।
অথবা,
কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা কালো মৃত্তিকা কী ?
Ans. অবস্থান :– দাক্ষিণাত্য মালভূমি অন্তর্গত মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ -এর পশ্চিমাংশ, গুজরাটের দক্ষিণাংশ, অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর – পশ্চিমাংশ, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর উত্তরাংশে এই মৃত্তিকার অবস্থান দেখা যায় ।
বৈশিষ্ট্য :-
(i) রং :– কৃষ্ণ মৃত্তিকা ব্যাসল্ট শিলা থেকে সৃষ্টি হয় । এই মৃত্তিকায় টাইটানিয়াম অক্সাইড ও জৈব যৌগের পরিমান বেশি থাকায় এই মৃত্তিকার রং কালো হয় ।
(ii) গ্রথন :- এই মৃত্তিকাতে শতকরা 50 – 60 ভাগ পলিকণা, 15 – 25 ভাগ কাদাকনা, 10 – 15 ভাগ সূক্ষ বালিকণা থাকে । এই মৃত্তিকাতে পলিকণা ও কাদাকনার ভাগ বেশি থাকায় অত্যন্ত সূক্ষ প্রধান খনিজ ।
(iii) খনিজের উপস্থিতি :- লোহা, চুন, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম কার্বনেট, অ্যালুমিনিয়াম, পটাশ এই মৃত্তিকার প্রধান খনিজ ।
(iv) উৎপাদিত শষ্য :- এই কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা রেগুর খুবই উর্বর । এই মৃত্তিকার PH মান 6.5 – 8.4 । কার্পাস চাষের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত । তাই এই মাটি কৃষ্ণ, কার্পাস মাটি বা ‘Black Cotton Soil’ নামে পরিচিত । এই মাটিতে মিলেট, তৈলবীজ, তামাক চাষও হয় । বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে কৃষ্ণ মৃত্তিকার সঙ্গে রাশিয়ার ডারনোজম মৃত্তিকার সিল পাওয়া যায় ।
গুরুত্ব :- এই মাটিতে মিলেট, কার্পাস, তৈলবীজ, তামাক ও পেঁয়াজের প্রচুর পরিমানে চাষ হয় । এই মৃত্তিকা পূর্বচাষের জন্য বিশেষ উপযোগী বলে একে Black Cotton Soil বলে ।
- মাটিক্ষয় কাকে বলে ? এর কারণগুলি লেখ ।
Ans. মাটিক্ষয়:– যে পক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ও মানবিক কার্যাবলীর প্রভাবে মাটির ওপরের হালকা ও অসংঘবদ্ধ মাটি কণা পৃথক হয়ে দূর – দূরান্তে অপসারিত হয়, তাকে মাটি ক্ষয় বা ভূমি ক্ষয় বলে ।
কারণ :-
(A) প্রাকৃতিক কারণ :-
(a) প্রবাহমান জলধারা :- প্রবাহমান জলধারা মাটি ক্ষয়ের প্রধান কারণ । প্রবাহমান জলধারা 4 টি পদ্ধতিতে মাটি ক্ষয় করে থাকে । যথা –
(i) সিট ক্ষয় :- মাটির ওপরের স্তর চাদরের আকারে আবৃত হয়ে যে ক্ষয় হয় তাকে পাত ক্ষয় বা সিট ক্ষয় বা চাদর ক্ষয় বলে ।
(ii) রিল ক্ষয় :- তীব্র জলস্রোত সরু প্রবাহপথ সৃষ্টি করে যে ক্ষয় করে তাকে রিল ক্ষয় বা নালি ক্ষয় বলে ।
(iii) গালি ক্ষয় :- নালি ক্রমশ প্রসস্থ ও গভীর হয়ে যে প্রবল ক্ষয়, তাকে খাত ক্ষয় বা গালি ক্ষয় বলে ।
(iv) পতন ক্ষয় :- পার্বত্য ঢালে বৃষ্টির জল মাটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করে প্রবেশ্য স্তর নরম হয়ে আলগা হয় । এই সময় স্তরটি জলের চাপে ও মাধ্যাকর্ষণের টানে পার্শ্বদেশ হঠাৎ নিচের দিকে নামতে থাকে একে পতন ক্ষয় বলে ।
(b) বায়ুপ্রবাহ :- মরুভূমি ও মরুপ্রায় অঞ্চলে বায়ু প্রবল বেগে বাহিত হয়ে মাটি ক্ষয় ঘটায় ।
(c) বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি :- বৃষ্টিপাতের যে অঞ্চলে বেশি হয় সেখানে মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি হয় আবার জলের ফোঁটা বড়ো ও ছোটো হলে মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি বা কম হয় ।
(d) ভূপ্রকৃতি ও ভূমির ঢাল :- বন্ধুর পার্বত্য ও মালভূমির ঢাল খাড়া হওয়ায় ভূপৃষ্ঠীয় প্রবাহের গতিবেগ ও শক্তি যে হয়ে ভূমি ক্ষয় দ্রুততর হয় ।