ভারত – প্রাকৃতিক পরিবেশ
অবস্থান, প্রশাসনিক বিভাগ
- ভারতের অক্ষাংশগত অবস্থান লেখ ।
উঃ – ভারত দক্ষিণে 8°4′ উত্তর অক্ষাংশ (কন্যা কুমারিকা অন্তরীপ) থেকে উত্তরে 37°6′ উত্তর অক্ষাংশ (কাশ্মীরের ইন্দিরাকল) পর্যন্ত বিস্তৃত । অক্ষাংশগত ভাবে ভারত উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত।
- ভারতের সীমানা বর্ণনা কর ।
উঃ – ভারতের উত্তরে হিমালয় পর্বত এবং চিন, নেপাল, ভুটান অবস্থিত । ভারতের পশ্চিমে পাকিস্থান ও আরব সাগর, পূর্বে মায়ানমার ও বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা ও ভারত মহাসাগর ।
- উপদ্বীপ কাকে বলে ?
উঃ – তিনদিক জলভাগ দ্বারা বেষ্টিত স্থল ভাগকে উপদ্বীপ বলে ।
যেমন – ভারত হল একটি উপদ্বীপ । কারন ভারতের তিন দিকে রয়েছে তিনটি সাগর (পূর্বে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর এবং দক্ষিণে ভারত মহাসাগর)। ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম উপদ্বীপ ।
- উপসাগর কাকে বলে ?
উঃ – তিনদিক স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত জলভাগকে উপসাগর বলে ।
যেমন – কচ্ছ উপসাগর, খাম্বাত উপসাগর ইত্যাদি ।
- ভারতের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের নাম লেখ ?
উঃ – i) ভারতের বৃহত্তম রাজ্য – রাজস্থান
ii) বৃহত্তম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল – আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপ ।
iii) ক্ষুদ্রতম রাজ্য – গোয়া
iv) ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল – লাক্ষাদ্বীপ ।
- ভারতের পশ্চিমে ও দক্ষিণে অবস্থিত উপসাগরগুলির নাম লেখ ।
উঃ –
♦ পশ্চিমে ভারতের উপসাগর হল – কচ্ছ উপসাগর ও খাম্বাত উপসাগর ।
♦ দক্ষিনে ভারতের উপসাগর হল – মান্নার উপসাগর ।
- ভারতের কোন রাজ্যের জেলার সংখ্যা সর্বাধিক এবং সর্বনিম্ন ?
উঃ – ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের জেলার সংখ্যা সর্বাধিক (72 টি) এবং ত্রিপুরা ও সিকিম রাজ্যের জেলার সংখ্যা সর্বনিম্ন (4 টি) ।
- সর্বাধিক রাজ্য দ্বারা সীমানা স্পর্শ করেছে এমন দুটি রাজ্যের নাম লেখ ?
উঃ – সর্বাধিক রাজ্য দ্বারা সীমানা স্পর্শকারী রাজ্য হল –
i) উত্তরপ্রদেশ – 8টি (উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান ও বিহার)।
ii) অসম – 7টি (পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ)।
- ভারতের রাজ্যসমূহের পুনঃর্গঠনের প্রধান ভিত্তি কী ছিল ?
উঃ – ভারতের রাজ্যসমূহের পুনঃর্গঠনের প্রধান ভিত্তিগুলি হল – ভাষা, সংস্কৃতি, প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রাকৃতিক সাদৃশ্য ।
- SAARC কী ?
উঃ – পুরো অর্থ – South Asian Association For Regional Co-Operation বা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা পরিষদ ।
স্থাপন – 8 ডিসেম্বর, 1985 খ্রিস্টাব্দ ।
সদস্য দেশ – ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ (8টি) ।
সদর দপ্তর – নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু ।
- ভারতকে উপমহাদেশ বলা হয় কেন ?
উঃ – এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণাংশে ভারতসহ পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ভূ-প্রাকৃতিক, জলবায়ু, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সাদৃশ্য দেখা যায় । 6 টি দেশের মধ্যে একেবারে মধ্যভাগে অবস্থিত ভারতের ক্ষেত্রমান, জনসংখ্যা এবং প্রভাব প্রতিপত্তি সবচেয়ে বেশি । ভারত হল এই অঞ্চলটির মূলচালিকা শক্তি । তাই এই অঞ্চলকে ভারতীয় উপমহাদেশ বলা হয় ।
- ভারতের সীমান্তরেখার বিভিন্ন নাম লেখ ?
উঃ –
সীমান্ত রেখা |
রাষ্ট্র |
ম্যাকমোহন লাইন | অরুণাচল প্রদেশে ভারত – চিন |
র্যাডক্লিফলাইন | ভারত – পাকিস্তান |
ডুরান্ড লাইন | ভারত – আফগানিস্তান |
Line of Control [LOC] | ভারত – পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর |
Line of Actual Control [LAC] | ভারত – চিন অধিকৃত কাশ্মীর |
24° প্যারালাল | ভারত – পাকিস্তান (পাক দাবি) |
28° প্যারালাল | ভারতীয় কাশ্মীর – পাকিস্তানের কাশ্মীর |
- ভারতের রাজ্য পুনর্গঠনের ভিত্তিগুলি কী কী ?
উঃ – ভারতের রাজ্য পুনর্গঠনের ভিত্তিগুলি হল –
i) ভাষা – বহু ভাষার দেশ ভারতে 122 টি প্রধান ভাষা এবং 22 টি সংবিধান স্বীকৃত ভাষা আছে । তাই মূলত আঞ্চলিক ভাষার ভিত্তিতেই রাজ্য ভাগ করা হয়েছে ।
যেথা – অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু ।
ii) উন্নয়ন পরিকল্পনা – সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন ঘটানো ও পরিকল্পনা গ্রহনের জন্য উত্তরাখন্ড, ছত্তিশ গড়ের জন্ম হয় ।
iii) প্রশাসনিক সুবিধা – সুবিশাল রাজ্যের প্রশাসনিক কাজ কর্মচালানোর জটিলতার জন্য রাজ্য পুনর্গঠন করা হয় ।
যেমন – উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ত্রিপুরা ।
iv) সংস্কৃতি – সামাজিক, আচার-অনুষ্ঠান, সংস্কারের পার্থক্যের জন্য একই ভাষা সত্ত্বেও রাজ্য গঠন করা হয়েছে ।
যেমন – ঝাড়খন্ড, উত্তরাখণ্ড ।
v) প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক – অভিন্ন প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক পরিবেশের জন্য রাজ্য গঠন করা হয় ।
- ভারতের ভূ–প্রাকৃতিক বিভাগগুলি কী কী ?
উঃ – ভূতাত্ত্বিক গঠন ও ভূমিরূপের বৈশিষ্টানুসারে ভারত কে 5টি প্রধান ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়, যথা –
i) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল
ii) বৃহৎ সমভূমি অঞ্চল
iii) উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল
iv) উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল
v) দ্বীপ অঞ্চল
- ভারতের আয়তন লেখ ।
উঃ – 32 লক্ষ 87 হাজার 782 বর্গকিমি ।
- আয়তনে পৃথিবীতে ভারতের স্থান – সপ্তম ।
- জনসংখ্যা (2011) – 121 কোটি 1 লক্ষ 93 হাজার 4 শত 22 জন ।
- ভারতের উত্তরতম বিন্দু – কাশ্মীরের ইন্দিরা কল ।
- ভারতের দক্ষিণতম বিন্দু – আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ইন্দিরা পয়েন্ট ।
- ভারতের মূল ভূখন্ডের দক্ষিণতম বিন্দু – কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ ।
- ভারতের পূর্বতম বিন্দু – অরুণাচল প্রদেশের কিবিথু ।
- ভারতের পশ্চিমতম বিন্দু – গুজরাটের গুহার মোটা ।
- ভারতের প্রমান দ্রাঘিমারেখা – 82°30′ পূর্ব ।
- ভারতের নবীনতম রাজ্য – তেলেঙ্গানা ।
- ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে বৃহত্তম – আয়তনে রাজস্থান, জনসংখ্যায় উত্তরপ্রদেশ, জনঘনত্বে বিহার ।
- ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে ক্ষুদ্রতম – আয়তনে গোয়া, জনসংখ্যায় সিকিম, জনঘনত্বে অরুণাচল প্রদেশ ।
- কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে বৃহত্তম – আয়তনে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, জনসংখ্যায় ও জনঘনত্বে দিল্লি ।
- কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে ক্ষুদ্রতম – আয়তনে ও জনসংখ্যায় লাক্ষাদ্বীপ, জনঘনত্বে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ।
- ভারতের প্রথম ভাষাভিত্তিক রাজ্য – অন্ধ্রপ্রদেশ ।
- ভারতের বৃহত্তম জেলা – কচ্ছ ।
- ভারতের ক্ষুদ্রতম জেলা – মাহে ।
- ভারতের রাষ্ট্রীয় ভাষা – হিন্দি ।
- ভারতের প্রধান সংযোগ কারী ভাষা – ইংরেজি ।
- ভারতের সংবিধান স্বীকৃত ভাষা – 22 টি ।
- ভারতের মোট জেলা সংখ্যা – 683 টি ।
- সর্বাধিক জেলার সংখ্যাবিশিষ্ট রাজ্য – উত্তরপ্রদেশ (72টি) ।
- সর্বনিম্ন জেলার সংখ্যাবিশিষ্ট রাজ্য – সিকিম (4টি) ।
- অর্থনৈতিক রাজধানী ও ভারতের প্রবেশদ্বার – মুম্বাই ।
- ভারতের সর্বাধিক সাক্ষরতার হার – কেরালা ।
- ভারতের সর্বনিম্ন সাক্ষরতার হার – বিহার ।
- ভারতের পূর্ব – পশ্চিম দ্রঘিমারেখার মধ্যে সময়ের পার্থক্য – 1 ঘন্টা 56 মিনিট বা প্রায় 2 ঘন্টা ।
- ভারতের উল্লেখযোগ্য প্রণালী –
উঃ –
প্রনালী |
অবস্থান |
i) গ্রেট চ্যানেল | আন্দামান ও নিকোবর, ইন্দোনেশিয়া |
ii ) 10° চ্যানেল | আন্দামান ও নিকোবর |
iii) 9° চ্যানেল | মিনিকয় ও লাক্ষাদ্বীপ |
iv) 8° চ্যানেল | মালদ্বীপ ও মিনিকয় |
v) মান্নার উপসাগর ও পক প্রনালী | ভারত ও শ্রীলঙ্কা |
- দুন কাকে বলে ?
উঃ – শিবালিক পর্বতের উত্তরে যে সমতল অনুদৈর্ঘ্য উপত্যকা সৃষ্টি হয়েছে উত্তরাখন্ডের স্থানীয় ভাষায় তাকে দুন বলে ।
উৎপত্তি – শিবালিকের উত্থানের পরে হিমাদ্রি ও হিমাচল থেকে আগত নদীগুলি রুদ্ধ হয়ে হ্রদ সৃষ্টি করে এবং ক্ষতিয় পদার্থ জমা হতে থাকে । পরে নদীগুলি শিবালিক কেটে দক্ষিণে প্রবাহিত হলে এদের জল সরে গিয়ে প্রশস্ত সমভূমি গঠন করে ।
উদাহরণ – দেরাদুন হল ভারতের বৃহত্তম দুন ।
- ছিটমহল কী ?
উঃ – ইংরেজ শাসনের অবসানের পর ভারত ভাগের সময় 8 টি থানা (পঞ্চগর, ডিমলা, দেবীগঞ্জ, পাটগ্রাম, হাতিবাঁধা, লাল মনির হাট, ফুলবাড়ি ও ভূরাঙ্গামারি ) এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে চলে যায় অর্থাৎ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং বাংলাদেশের কিছু ভূখন্ড ভারতে চলে আসে । এই জমিগুলি হল ছিটমহল ।
- কাশ্মীর উপত্যকা কাকে বলে ?
উঃ – জম্বু কাশ্মীর রাজ্যের পিরপাঞ্চল ও জাস্কর পর্বতের মাঝে বিশ্ব বিখ্যাত হ্রদ সমভূমিকে কাশ্মীর উপত্যকা বলে ।
বৈশিষ্ট্য –
i) এটি 135 কিমি দীর্ঘ 40 কিমি প্রশস্ত 4921 বর্গকিমি ক্ষেত্র যুক্ত ।
ii) ডাল, উলার হ্রদ, বরফাবৃত শৃঙ্গ, পপলার চিনার বিক্ষেপ, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য এটি ভূস্বর্গ নামে বিশ্ব বিখ্যাত ।
উৎপত্তি – প্রাচীনকালে এখানে হ্রদ ছিল যা নদী ও হিমবাহ দ্বারা ভরাট হয়ে সমভূমিটি সৃষ্টি হয় । উপত্যকার 100 – 200 মিটার উঁচু ভূমিটিতে যে ধাপযুক্ত উর্বর পলিস্তর সৃষ্টি হয়েছে , তা কারেওয়া নামে পরিচিত । এতে জাফরান চাষ প্রসিদ্ধ ।
- আকসাইচিন কী ?
উঃ – চিন অধিকৃত কাশ্মীরে কারকোরামের উত্তর -পূর্বে পর্বত বেষ্টিত উঁচু মালভূমি হল আকসাইচিন । উচ্চতা 4500 মিটারেরও বেশি । লবণাত্মক হ্রদ লিং জিটান আছে ।
- সোডা সমভূমি কী ?
উঃ – জম্বু কাশ্মীরের উত্তর -পূর্বে আকসাইচিন মালভূমির উত্তরে প্রায় সমতল উচ্চভূমি হল সোডা সমভূমি । এটি চিন অধিকৃত ।
- মরুস্থলী শব্দের অর্থ কী ? এই প্রকার নামকরণের কারণ কী ?
উঃ – ‘মরু’ শব্দের অর্থ মৃত ও ‘স্থলী’ শব্দের অর্থ দেশ । অর্থাৎ মৃতের দেশ ।
এই মরুস্থলীটি ভারতীয় মরুভূমির সর্ব পশ্চিমে অবস্থিত । এই অঞ্চলে মাইলের পর মাইল জুড়ে ছড়িয়ে আছে ।শুধু বালি আর বালি । কোথাও সবুজের কোনো চিহ্ন নেই । অতি অল্প বৃষ্টিপাতের কারনে এই অঞ্চলে জীবনের অস্তিত্ব প্রায় নেই বলে এই অঞ্চলটির নাম মরুস্থলী বা মৃতের দেশ নামকরণ হয়েছে ।
- ডেকানট্র্যাপ কী ?
উঃ – উপদ্বীপীয় মালভূমির উত্তর -পশ্চিমাংশে ব্যাসল্ট লাভা গঠিত ও পূর্বাংশে ধাপযুক্ত অঞ্চলকে ডেকানট্র্যাপ বলে ।
উৎপত্তি – ক্রেটাসিয়াস থেকে ইয়োসিন যুগে কয়েককোটি বছর আগে বিদার অগ্ন্যুৎপাতে তরল ব্যাসল্ট লাভা চাদরের আকারে জমা হয়ে সৃষ্টি হয় ।
বৈশিষ্ট্য –
i) ক্ষেত্রমান প্রায় 5 লক্ষ বর্গকিমি ।
ii) লাভা স্তর পূর্বে 150 মিটার থেকে পশ্চিমে 3000 মিটার গভীর ।
iii) লাভা নির্গমনে বিরতির জন্য পূর্ব দিক সিঁড়ির মতো ধাপযুক্ত ।
- তাল কী ? উদাহরণ দাও ?
উঃ – ক্ষুমায়ন হিমালয়ে হিমবাহ ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে অসংখ্য অবনমিত অংশের সৃষ্টি হয় । পরবর্তীকালে এই অবনমিত অংশগুলিতে জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয় । এই হ্রদগুলিকে স্থানীয় ভাষায় তাল বলে ।
যেমন – সাততাল, ভিমতাল, পুনাতাল, নৈনিতাল ।
51. পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম হিমালয়ের মধ্যে পার্থক্য লেখ ?
উঃ –
বিষয় |
পূর্ব হিমালয় |
পশ্চিম হিমালয় |
i) বিস্তার | এটি সিঙ্গালীলা পর্বত থেকে নামচাবারওয়া শৃঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত । | এটি নাঙ্গাপর্বত থেকে কালি নদী পর্যন্ত বিস্তৃত । |
ii) শিবালিক | পূর্ব হিমালয়ে শিবালিক পর্বতের অস্তিত্ব নেই । | পশ্চিম হিমালয়ে শিবালিক পর্বতের অবস্থান সুস্পষ্ট । |
iii) ঢাল | দক্ষিণ থেকে উত্তরে উচ্চতা হঠাৎ বাড়ায় খাড়া ঢাল যুক্ত । | দক্ষিণ থেকে উত্তরে উচ্চতা ধীরে বৃদ্ধি পাওয়ায় মৃদু ঢাল । |
iv) পর্বত | এখানে পর্বত, শৃঙ্গ, হিমবাহের সংখ্যা খুব কম ।
যথা – সিঙ্গালিলা, দার্জিলিং পর্বত, কাঞ্চনজঙ্ঘা, নামচা বারওয়া শৃঙ্গ। |
এখানেপর্বত, শৃঙ্গ, হিমবাহের সংখ্যা অনেক বেশি ।
যথা – লাদাখ, কারাকোরাম, জাস্করপর্বত, k2, কামেট শৃঙ্গ। |
- হিমালয় পর্বতমালাকে কী কী অঞ্চলে ভাগ করা হয় ?
উঃ – দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয় পর্বত মালাকে 3টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়, –
যথা – i) পশ্চিম হিমালয়
ii) মধ্য হিমালয়
iii) পূর্ব হিমালয়
প্রস্থ বরাবর হিমালয় পর্বত মালাকে 4 ভাগে ভাগ করা হয়, –
যথা – i) টেথিস হিমালয়
ii) হিমাদ্রি হিমালয়
iii) হিমাচল হিমালয়
iv) শিবালিক হিমালয়
- দুন কাকে বলে ?
উঃ – হিমালয়ের পাদদেশের অংশই শিবালিক । 10-50 কিমি প্রশস্ত ও গড়ে 600 মিটার উচ্চ অংশটি পূর্বে সৃষ্টি হওয়া হিমাদ্রি ও হিমাচল থেকে নদী প্রবাহিতপলি, বালি, প্রস্তর-কণা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয়েছে । শিবালিকের দক্ষিণ ঢাল খাড়া, উত্তর দিকের ঢাল ঢালু হয়ে নেমে গেছে সমতল উপত্যকায় । এগুলিকেই দুন বলে ।
যেমন – দেহরাদুন (বৃহত্তম), রাজৌলি দুন, চৌখম্বা দুন, পতৌতি দুন । অঞ্চলগুলি উর্বর বলে কৃষি সমৃদ্ধ ।
- ভারত এশিয়ার দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ কোথায় নির্মান করা হয়েছে ?
উঃ – বানিহালে এশিয়ার দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ জওহর টানেল নির্মান করা হয়েছে ।
- ভূস্বর্গ কাকে বলে ?
উঃ – কোলাহোই পর্বত শৃঙ্গের পূর্বে হিন্দু দের তীর্থস্থান অমরনাথ গুহা অবস্থিত । এখানকার হিমাদ্রি ও পিরপাঞ্জালের মধ্যে 150 কিমি দীর্ঘ 380 কিমি প্রশস্ত কাশ্মীর উপত্যকাকে প্রাকৃতির সৌন্দের্যের জন্য তাকে ভূস্বর্গ বলে ।
- ভারতের বৃহত্তম মিষ্টি জলের হ্রদের নাম লেখ ?
উঃ – ডাল ও উলার মিষ্টি জলের হ্রদ ।
- ডোবা খোলা বা বাদুড়ের গুহা কাকে বলে ?
উঃ – পূর্ব-পশ্চিমে 240 কিমি দীর্ঘ ও উত্তর-দক্ষিণে 97 কিমি প্রশস্ত । এখানকার গারো পাহাড় (সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নুরুরেক – 1,412 মিটার), খাসিয়া পাহাড় (সর্বোচ্চ শৃঙ্গ শিলং পাহাড় – 1,961 মিটার) ও জয়ন্তিয়া উল্লেখযোগ্য । এই মালভূমিতে পার্বত্য গুহা আছে । গারো পাহাড়ের সিজু (1,900 মিটার দীর্ঘ), গুহাটি বিখ্যাত । একে স্থানীয় ভাষায় ডোবা খোলা বা বাদুড়ের গুহা বলে ।
- ঘগগর কাকে বলে ?
উঃ – ঘগগর :- ভারতের মরু অঞ্চলটি পাঞ্জাব সমভূমির দক্ষিণে রাজস্থান রাজ্যের আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে অবস্থিত । এটি সিন্ধু-গঙ্গা সমভূমির শুষ্ক অঞ্চল । এক সময় শতদ্রু, সরস্বতী, দৃশদবতী নদী এখানে প্রবাহিত ছিল । সরস্বতী নদীর শুষ্ক খাত এখনও রয়েছে । একেই ঘগগর বলে ।
- ভূপ্রকৃতি অনুসারে মরু অঞ্চলকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ?
উঃ – শ্রেণিবিভাগ – ভূপ্রাকৃতিক তারতম্য অনুসারে মরু সমভূমিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-
i) বাগর :- মরুভূমির পুর্বদিকে আরাবল্লি পর্বতের পাদদেশের অংশটি বাগর নামে পরিচিত ।
ii) রোহি :- আরাবল্লির পশ্চিমের নদীবিধৌত উর্বর প্লাবনভূমি অঞ্চল হল রোহি ।
iii) ক্ষুদ্র মরু :- রোহির পশ্চিম প্রান্তের অংশ হল ক্ষুদ্র মরু অঞ্চল ।
iv) হামাদা :- ক্ষুদ্র মরুর পশ্চিম প্রান্তে বালি ও শিলাখন্ড দ্বারা গঠিত অঞ্চল হল হামাদা ।
v) মরুস্থলী :- হামাদার পশ্চিমের অঞ্চলটি সম্পূর্ণ বালুকাময়, রুক্ষ ও উদ্ভিদহীন অঞ্চল । এটিই হল আসল থর মরুভূমি । মরুস্থলীতে বহু বালিয়াড়ি দেখা যায় । এগুলিকেই ধ্রিয়ান বলে । ধ্রিয়ান শব্দের অর্থ অস্থিতিশীল বা চলমান ।
- বীহড় কাকে বলে ?
উঃ – পূর্ব রাজস্থান উচ্চভূমির পুর্বে অবস্থিত অঞ্চলটি উত্তর -পূর্বে ঢালু । চম্বল এখান কার প্রধাননদী । চম্বল অঞ্চলের এবড়ো খেবড়ো ভূমিকে বীহড় বলে ।
- ময়দান বা মালনাদ কাকে বলে ?
উঃ – মহারাষ্ট্র মালভূমির দক্ষিণে এই মালভূমি অবস্থিত । এই মালভূমির উত্তর-পূর্বাংশ কিছুটা কম উচ্চ । একে ‘ময়দান’ বলে । কর্ণাটক মালভূমির দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশ অধিক উচ্চ । একে ‘মালনাদ’ বলে ।
- নীলগিরির কুন্ডা কাকে বলে ?
উঃ – পূর্বঘাট, পশ্চিম ঘাট ও দক্ষিণ ঘাট পর্বত শ্রেণীর মিলন ক্ষেত্রে নীলগিরি অবস্থিত । দোদাবেতা, মাকুর্তি নীলগিরির প্রধান শৃঙ্গ । নীলগিরির দক্ষিণ-পশ্চিমাংশকে কুন্ডা বলে ।
- দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম কী ?
উঃ – পশ্চিম ঘাটের আনাইমুদি ।
- পূর্ব উপকূল সমভূমিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ?
উঃ – পূর্ব উপকূল সমভূমিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –
i) উত্তর সরকার উপকূল
ii) করমণ্ডল উপকূল
i) উত্তর সরকার উপকূল :- এই উপকূলের উত্তরাংশের সুবর্ণ রেখার মোহনা থেকে কৃষ্ণা নদীর মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে উত্তর সরকার উপকূল বলে ।
ii) করমণ্ডল উপকূল :- এই উপকূল কৃষ্ণা নদীর মোহনা থেকে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত দক্ষিণাংশের উপকূলকে করমণ্ডল উপকূল বলে ।
- থেড়িস কাকে বলে ?
উঃ – পুলিকট হ্রদ থেকে কন্যাকুমারীকা অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত । উপকূলটি 100 কিমি চওড়া । এখানে কাবেরী নদীর বদ্বীপ আছে । এই উপকূলে বহু বালিয়াড়ি দেখা যায় । এগুলিকে স্থানীয় ভাষায় থেড়িস বলে ।
- কয়াল কাকে বলে ?
উঃ – কেরল রাজ্যের এই উপকূল গড়ে 25 কিমি প্রশস্ত এখানে শৈলশিরা দেখা যায় । এখানে বহু লেগুন বা ব্যাকওয়াটার দেখা যায় । স্থানীয় ভাষায় এগুলিকে কয়াল বলে । এখানে ভেম্বানাথ কয়াল বিখ্যাত ।
- পূর্ব উপকূল সমভূমি ও পশ্চিম উপকূল সমভূমির মধ্যে পার্থক্য লেখ ।
উঃ – পূর্ব উপকূল সমভূমি ও পশ্চিম উপকূল সমভূমির মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় |
পূর্ব উপকূল সমভূমি |
পশ্চিম উপকূল সমভূমি |
i) বিস্তার | পূর্ব উপকূল সমভূমি চওড়া (গড় বিস্তার 100 – 200 কিমি)। | পশ্চিম উপকূল সমভূমি সংকীর্ণ (গড় বিস্তার 60 – 75 কিমি)। |
ii) দৈর্ঘ্য | পূর্ব উপকূল কম দীর্ঘ (1500 কিমি) | পশ্চিম উপকূল তুলনা মূলক বেশি (2500 কিমি) |
iii) হ্রদ ও উপহ্রদ | হ্রদ ও উপহ্রদের সংখ্যা কম (তবে চিল্কা হ্রদ উল্লেখযোগ্য) | হ্রদ ও উপহ্রদের সংখ্যা বেশি (স্থানীয় নাম কয়াল) |
iv) বদ্বীপ | মহানন্দা, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী নদীতে বদ্বীপ আছে । | নর্মদা ও তাপ্তি নদীতে বদ্বীপ সৃষ্টি হয়নি । |
v) সমুদ্র বন্দর | উপকূল ভগ্ন নয় বলে বন্দরের সংখ্যা কম । | উপকূল ভগ্ন বলে বন্দরের সংখ্যা বেশি । |
- ভূ–প্রাকৃতিক বিভাগ সমূহের গুরুত্ব আলোচনা কর ?
উঃ – ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এগুলি হল –
i) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের গুরুত্ব :-
a) উত্তর ভারতের প্রায় সমস্ত নদীই এই পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়েছে এবং এদের পলি দিয়েই ভারতের বিশাল সমভূমি গঠিত হয়েছে ।
b) হিমালয়ের বনভূমি ভারতের সম্পদ ।
ii) উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের গুরুত্ব :-
a) সমভূমি বলে পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ।
b) নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বহু শহর-নগরের বিস্তার ঘটেছে ।
iii) উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চলের গুরুত্ব :-
a) মালভূমি বলে উপদ্বীপীয় নদীগুলির খরস্রোত; জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী ।
b) লাভা গঠিত কালো মাটি তুলা, গম ও আখ চাষের উপযোগী ।
iv) উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের গুরুত্ব :-
a) পূর্ব উপকূল প্রশস্ত ও পলিগঠিত । ফলে কৃষি সহায়ক অধিবাসীর কৃষি জীবি ।
b) পূর্ব উপকূলের নদীগুলি নাব্য বলে পরিবহন ও মৎস্য শিকারের উপযোগী ।
v) দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলের গুরুত্ব :-
a) আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বিশাল বনভূমিতে কাষ্ঠ সম্পদ আহরন ও কাষ্ঠ শিল্পের সঙ্গে বহু লোক নিযুক্ত ।
b) দ্বীপপুঞ্জে প্রচুর নারকেল গাছ থাকায় এর সঙ্গে বহু লোক যুক্ত ।
- বেট কাকে বলে ?
উঃ – পূর্বে যমুনা ও পশ্চিমে শতদ্রু নদীর মধ্য ভাগে পাঞ্জাব সমভূমি অবস্থিত । শতদ্রু ও ইরাবতী নদী বাহিত পলি সঞ্চয়ে এই সমভূমিটির উৎপত্তি হয়েছে । পাঞ্জাব সমভূমির নবীন পলি মৃত্তিকা বেট নামে পরিচিত ।
- ভাঙর ও খাদেরের মধ্যে পার্থক্য লেখ ।
উঃ – ভাঙর ও খাদেরের মধ্যে পার্থক্য :-
পার্থক্যের বিষয় |
ভাঙর |
খাদার |
i) অবস্থান | উচ্চ গঙ্গা সমভূমির নদী থেকে দূরবর্তী অঞ্চলের পলি গঠিত কিছুটা উঁচু সমতল ভূমি । | উচ্চ গঙ্গা সমভূমির নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের পলি গঠিত কিছুটা নীচু সমতল ভূমি । |
ii) প্রাচীনত্ব | এই পলি মাটি বয়েসে প্রাচীন । | এই পলিমাটি বয়েসে নবীন । |
iii) উপাদান | এই মাটিতে চুন জাতীয় পদার্থ বেশি থাকে । | এই মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকে । |
iv) উর্বরতা | এই মাটির উর্বরতা কম । | এই মাটির উর্বরতা বেশি । |
v) বন্যা ও পলি সঞ্চয় | বন্যার প্রকোপ কম বলে এখানে পলি সঞ্চয়ের পরিমাণ ও কম । | বন্যার প্রকোপ বেশি বলে প্রতিবছর বন্যায় এখানে নতুন পলি সঞ্চয় ঘটে |
vi) পরিচিতি | উত্তরপ্রদেশে ‘খাদার’ এবং পাঞ্জাবে ‘ধায়া’। | পাঞ্জাবে ‘বেট’। |
- উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের ভূ–প্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উঃ – উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল ও দক্ষিণের উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্য ভাগে অবস্থান করেছে উত্তরের বিশাল সমভূমি । সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র নদী অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই সমভূমিটি ভারত তথা বিশ্বের বৃহত্তম সঞ্চয়জাত সমভূমি ।
ভূ–প্রকৃতি – ভূপ্রকৃতি সমতল ও বৈচিত্রহীন । ভূপ্রকৃতির তারতম্য অনুসারে পূর্বে এই অঞ্চল ভাবর, তরাই, ভাঙ্গর, খাদার এই চার ভাগে ভাগ করা হত ।
শ্রেণি বিভাগ – ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে উত্তরের সমভূমি অঞ্চলকে চারটি ভাগে ভাগ কারা হয়, যথা –
i) ব্রহ্মপুত্র সমভূমি :- সমগ্র অসম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার উপনদীর পলি জমে এই সমভূমি সৃষ্টি হয়েছে । দৈর্ঘ্য প্রায় 750 কিমি, বিস্তার 80 কিমি । এখানে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে পৃথিবীর বৃহত্তম নদী মধ্যবর্তী মাজুলি দ্বীপে গড়ে উঠেছে ।
ii) গঙ্গা সমভূমি :- যমুনা নদী থেকে বাংলাদেশ সীমানা পর্যন্ত উত্তরে সমভূমির বৃহৎ অঞ্চলটি উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত । আয়তন প্রায়75 লক্ষ বর্গকিমি । গঙ্গা সমভূমিকে তিনটি উপ-অঞ্চলে ভাগ করা হয়, যথা –
গঙ্গা সমভূমি |
||
উচ্চ গঙ্গা সমভূমি |
মধ্য গঙ্গা সমভূমি |
নিম্ন গঙ্গা সমভূমি |
পশ্চিমে যমুনা নদী থেকে পূর্বে এলাহাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত । এই সমভূমি গঙ্গা যমুনা দোয়াব, রোহিল খন্ড সমভূমি, অযোধ্যা ও যমুনা পার সমভূমি নিয়ে গঠিত । | এলাহাবাদ থেকে পূর্বে রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত মধ্য গঙ্গা সমভূমি প্রায় 600 কিমি দীর্ঘ, উচ্চতা 100 মিটার । এখানে ভাঙ্গার ও খাদার রয়েছে । | রাজমহল পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগর মোহনা পর্যন্ত দার্জিলিং ও পুরুলিয়া বাদে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে সমভূমিটি বিস্তৃত । |
iii) পাঞ্জাব সমভূমি :- পূর্বে যমুনা নদী থেকে পশ্চিমে শতদ্রু ও বিপাশা নদীর অববাহিকা পর্যন্ত বিস্তৃত এই সমভূমি সিন্ধুর উপনদী বিতস্তা, ইরাবতী, বিপাশা, চন্দ্রভাগা ও শতদ্রুর পলি সঞ্চয়ে গঠিত ।
বৈশিষ্ট্য –
a) দোয়াব – এখানকার নদী মধ্যবর্তী সমভূমিকে দোয়াব বলে ।
b) ধায়া ও বেট – প্রাচীন প্লাবন সমভূমিকে ধায়া ও নবীন গঠিত অঞ্চলকে বেট বলে ।
c) খোস বা চোস – উত্তরের ক্ষয়প্রাপ্ত অঞ্চলকে খোস বা চোস বলে ।
iv) ভারতীয় মরু সমভূমি :- ভারতের পশ্চিমে রাজস্থান রাজ্যের পশ্চিম দিকে থর মরুভূমির ভারতের অংশটি ভারতীয় মরু বা মরুস্থলী বা মৃতের দেশ নামে পরিচিত । বালি, পাথর, কাঁকড় পূর্ণ এই অঞ্চলের আয়তন প্রায়75 লক্ষ বর্গকিমি । অঞ্চলটি ক্ষুদ্র পাঁচটি উপঅঞ্চলে বিভক্ত ।
যথা – a) বাগার – একেবারে পূর্বপ্রান্তে আরাবল্লি পর্বতের পাদদেশে স্বল্প পলি যুক্ত তৃণ অঞ্চল হল বাগার ।
b) রোহি – আরাবল্লির পশ্চিমাংশে যে প্লাবন ভূমি সেটিই রোহি ।
c) থালি – রোহির পশ্চিমাংশে সংকীর্ণ বালিময় সমভূমি হল থালি ।
d) হামাদা – শিলা বা প্রস্তরময় মরু ভূমি হামাদা ।
e) আর্গ – পশ্চিম সীমান্তে বালুকা ময় মরুভূমি হল আর্গ ।
- প্রস্থ অনুযায়ী হিমালয়ের শ্রেণিবিভাগ করে যে কোনো দুটি ভাগের বিবরণ দাও ?
উঃ – হিমালয় পর্বতটি বিভিন্ন উচ্চতার চারটি সমান্তরাল পর্বত শ্রেণির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে । দক্ষিণ থেকে উত্তরে বা প্রস্থ বরাবর চারটি পর্বতশ্রেণি হল –
i) শিবালিক হিমালয়
ii) হিমাচল হিমালয় বা অবহিমালয়
iii) হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয়
iv) টেথিস হিমালয় বা তিব্বতীয় হিমালয়
টেথিস হিমালয় :- বাংলায় একে হিমালয় ওর অঞ্চল বলে । হিমাদ্রির উত্তরে ট্রান্স বা টেথিস বা তিব্বতীয় হিমালয় অবস্থিত ।
বৈশিষ্ট্য –
a) উৎপত্তি কাল – আজ থেকে প্রায় 7 কোটি বছর আগে উৎপত্তি হয় ।
b) বিস্তার ও উচ্চতা – প্রকৃত পক্ষে এটি তুষার মালভূমি । প্রস্থ প্রায় 40 কিমি, দৈর্ঘ্য প্রায় 1000 কিমি এবং গড় উচ্চতা 5500-6000 মিটার ।
c) উল্লেখযোগ্য পর্বত শৃঙ্গ – এই অংশে জাস্কর পর্বত শ্রেণি অবস্থিত । এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লিওপারগেল । এছাড়া ও লাদাখ, কৈলাস ও কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি এবং আখসাইচিন মালভূমি আছে ।
হিমাদ্রি হিমালয় :- হিমাচল হিমালয়ের উত্তরে অবস্থান করেছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয় বা হিমগিরি । এটি মূলত গ্রানাইট ও নীস শিলা দ্বারা গঠিত ।
বৈশিষ্ট্য –
a) উৎপত্তি কাল – প্রায় 7-12 কোটি বছর আগে ।
b) বিস্তার ও গড় উচ্চতা – গড় বিস্তার 25 কিমি, গড় উচ্চতা 6000 মিটারের ও বেশি ।
c) উল্লেখযোগ্য পর্বত শৃঙ্গ – পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট, তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্জনজঙ্ঘা, মাকালু, ধবলগিরি, নন্দাদেবী, কামেট প্রভৃতি উচ্চতম শৃঙ্গগুলি অবস্থিত ।
- ভারতের উপকূলীয় সমভূমির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ।
উঃ – উপদ্বীপীয় মালভূমির দু-পাশে উপকূল বরাবর যে সংকীর্ণ উপকূল সমভূমি গড়ে উঠেছে, তাকে উপকূলীয় সমভূমি বলা হয় । এই উপকূলীয় সমভূমিকে 2 ভাগে ভাগ করা হয়, যথা –
i) পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি :– এই সমভূমির প্রধান তিনটি বিভাগ রয়েছে, যথা –
a) উপকূল সমভূমি – ওড়িশায় মূলত মহানদীর বদ্বীপ অংশে প্রায় 400 কিমি দীর্ঘ এই সমভূমি দেখা যায় ।
b) অন্ধ্র সমভূমি – উৎকল সমভূমির দক্ষিণে ও পুলিকট হ্রদ পর্যন্ত বিস্তৃত ।
c) তামিলনাড়ু সমভূমি – পুলিকট হ্রদ থেকে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত । একে দক্ষিণ ভারতের শষ্য ভান্ডার বলা হয় ।
ii) পশ্চিম উপকূলের সমভূমি :- এই সমভূমির প্রধান ছয়টি ভাগ রয়েছে, যথা –
a) কচ্ছের রণ – গুজরাটের উত্তরে প্রায় 73600 বর্গকিমি স্থান জুড়ে অবস্থিত । অগভীর জলাভুমি রণ নামে পরিচিত ।
b) কচ্ছ উপদ্বীপ – রণের দক্ষিণে কচ্ছ উপদ্বীপ অবস্থিত । কচ্ছ শব্দের অর্থ হল জলময় দেশ ।
c) কাথিয়া বাড় উপদ্বীপ – কচ্ছ উপদ্বীপের দক্ষিণাংশে এই অঞ্চল অবস্থিত । এখানে গির, গিরনার, ওসম প্রভৃতি পাহাড় দেখা যায় ।
d) গুজরাট সমভূমি – কাথিয়া বাড়ের দক্ষিণে সবরমতী, মাহি, নর্মদা নদী বাহিত পলি দ্বারা এই সমভূমি গঠিত ।
e) কোঙ্কন উপকূল সমভূমি – গুজরাট সমভূমি থেকে দক্ষিণে গোয়া পর্যন্ত এই সমভূমি 500 কিমি দীর্ঘ এই সমভূমি খুবই ভগ্ন ও সংকীর্ণ ।
f) কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি – গোয়া থেকে ম্যাঙ্গালর পর্যন্ত এই সমভূমিটি বিস্তৃত ।
- পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উঃ – পশ্চিম হিমালয় :- এই হিমালয় পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বত থেকে পূর্বে নেপালের পশ্চিম সীমানায় অবস্থিত কালি নদী পর্যন্ত বিস্তৃত । পশ্চিম হিমালয়কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।
যথা –
i) কাশ্মীর হিমালয় – জম্বু ও কাশ্মীরের প্রায় 5 লক্ষ বর্গ কিমি জুড়ে এর অবস্থান ।
a) শিবালিকের জম্বু ও পুঞ্চ পাহাড়, b) পিরপাঞ্চাল, c) জাস্কর পর্বত, d) লাডাক, ও e) কারাকোরাম পর্বত শ্রেণি কাশ্মীর হিমালয়ে অবস্থিত ।
ii) পাঞ্জাব ও হিমাচল হিমালয় – পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশের প্রায় 64 হাজার বর্গ কিমি জুড়ে এই হিমালয় অবস্থিত । ধাওলাধার, নাগটিব্বা, মুসৌরি এখানকার প্রধান শৈলশিরা ।
iii) কুমায়ুন হিমালয় – উত্তরাখন্ডে রাজ্যের প্রায় 4600 বর্গ কিমি জুড়ে এটি অবস্থান করেছে । এখানকার প্রধান পর্বত শ্রেণি হল – শিবালিক, হিমাচল ও হিমাদ্রি । শিবালিক ও হিমাচলের মাঝে দুন উপত্যকা অবস্থিত । এখানে যে সব হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ দেখা যায় তাদের তাল বলে ।
যেমন – নৈনিতাল, ভীমতাল, সাততাল ও পুনাতল প্রভৃতি ।
- দাক্ষিণাত্য মালভূমির অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য লেখ । / দাক্ষিণত্য মালভূমির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও । / দাক্ষিণাত্য মালভূমির ভূপ্রকৃতি আলোচনা কর ।
উঃ – দাক্ষিণাত্য মালভূমি :- উত্তরে বিন্ধ্য পর্বত, পূর্বে পূর্ব ঘাট পর্বত ও পশ্চিমে পশ্চিম ঘাট পর্বত দ্বারা বেষ্টিত মালভূমি অঞ্চলটি দাক্ষিণাত্য মালভূমি নামে পরিচিত । ভারতের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন এই ভূখন্ডটি গন্ডোয়ানা ল্যান্ডের অংশ বিশেষ । এই অঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা-
i) পার্বত্য অংশ – এই অঞ্চলকে আবার 3 ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা –
a) উত্তরের পার্বত্য সমূহ – এই পর্বত শ্রেণির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমর কন্টক (1057 মিটার) ।
b) পশ্চিমঘাট পর্বত বা সহ্যাদ্রি – এই পর্বত শ্রেণির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ভাভুলমালা (2339 মিটার) ।
c) পূর্বঘাট পর্বত বা মলয়াদ্রি – এই পর্বত শ্রেণির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বিলিগির রঙ্গন (1750 মিটার) ।
ii) মালভূমি অংশ – দাক্ষিণাত্য অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য মালভূমি গুলি হল –
a) মহারাষ্ট্র মালভূমি – মহারাষ্ট্রের ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত বিশাল মালভূমি অঞ্চলটি ডেকান্ট্র্যাপ নামে পরিচিত ।
b) কর্ণাটক মালভূমি – ডেকান্ট্র্যাপের দক্ষিণে অবস্থিত এই ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির গড় উচ্চতা 450 মিটার ।
c) তেলাঙ্গানা মালভূমি – কর্ণাটক মালভূমির পূর্বে অন্ধ্রপ্রদেশের এই মালভূমিটি প্রধানত নীস শিলাদ্বারা গঠিত ।
দাক্ষিণাত্য মালভূমির বৈশিষ্ট্য :-
i) এটি প্রাচীন গন্ডোয়ানা শিন্ডের অবশিষ্ট্যাংশ,
ii) প্রাচীন ও কঠিন গ্রানাইট, ব্যাসল্ট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত ।
iii) মালভূমিটি উত্তর – পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ পূর্ব দিকে ঢালু এবং উত্তর – দক্ষিণে প্রায় 1700 কিমি দীর্ঘ,
iv) গড় উচ্চতা প্রায় 600 মিটারের কাছাকাছি,
v) এটি প্রধানত ক্ষয়প্রাপ্ত ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি ।