ভারতের অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ (অধ্যায় ৫.১) অতিরিক্ত
Published 21-04-26
185 Views
Md. Monjujul Alam
Geography Tutor
Dist : Murshidabad

ভারতপ্রাকৃতিক পরিবেশ

অবস্থান, প্রশাসনিক বিভাগ

  1. ভারতের অক্ষাংশগত অবস্থান লেখ ।

উঃ – ভারত দক্ষিণে 8°4′ উত্তর অক্ষাংশ (কন্যা কুমারিকা অন্তরীপ) থেকে উত্তরে 37°6′ উত্তর অক্ষাংশ (কাশ্মীরের ইন্দিরাকল) পর্যন্ত বিস্তৃত । অক্ষাংশগত ভাবে ভারত উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত।

  1. ভারতের সীমানা বর্ণনা কর 

উঃ – ভারতের উত্তরে হিমালয় পর্বত এবং চিন, নেপাল, ভুটান অবস্থিত । ভারতের পশ্চিমে পাকিস্থান ও আরব সাগর, পূর্বে মায়ানমার ও বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা ও ভারত মহাসাগর ।

  1. উপদ্বীপ কাকে বলে ?

উঃ – তিনদিক জলভাগ দ্বারা বেষ্টিত স্থল ভাগকে উপদ্বীপ বলে ।

যেমন – ভারত হল একটি উপদ্বীপ । কারন ভারতের তিন দিকে রয়েছে তিনটি সাগর (পূর্বে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর এবং দক্ষিণে ভারত মহাসাগর)। ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম উপদ্বীপ ।

  1. উপসাগর কাকে বলে ?

উঃ – তিনদিক স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত জলভাগকে উপসাগর বলে ।

যেমন – কচ্ছ উপসাগর, খাম্বাত উপসাগর ইত্যাদি ।

  1. ভারতের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের নাম লেখ ?

উঃ – i) ভারতের বৃহত্তম রাজ্য – রাজস্থান

ii) বৃহত্তম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল – আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপ ।

iii) ক্ষুদ্রতম রাজ্য – গোয়া

iv) ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল – লাক্ষাদ্বীপ ।

  1. ভারতের পশ্চিমে ও দক্ষিণে অবস্থিত উপসাগরগুলির নাম লেখ

উঃ –

♦ পশ্চিমে ভারতের উপসাগর হল – কচ্ছ উপসাগর ও খাম্বাত উপসাগর ।

♦ দক্ষিনে ভারতের উপসাগর হল – মান্নার উপসাগর ।

  1. ভারতের কোন রাজ্যের জেলার সংখ্যা সর্বাধিক এবং সর্বনিম্ন ?

উঃ – ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের জেলার সংখ্যা সর্বাধিক (72 টি) এবং ত্রিপুরা ও সিকিম রাজ্যের জেলার সংখ্যা সর্বনিম্ন (4 টি) ।

  1. সর্বাধিক রাজ্য দ্বারা সীমানা স্পর্শ করেছে এমন দুটি রাজ্যের নাম লেখ ?

উঃ – সর্বাধিক রাজ্য দ্বারা সীমানা স্পর্শকারী রাজ্য হল –

i) উত্তরপ্রদেশ – 8টি (উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান ও বিহার)।

ii) অসম – 7টি (পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ)।

  1. ভারতের রাজ্যসমূহের পুনঃর্গঠনের প্রধান ভিত্তি কী ছিল ?

উঃ – ভারতের রাজ্যসমূহের পুনঃর্গঠনের প্রধান ভিত্তিগুলি হল – ভাষা, সংস্কৃতি, প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রাকৃতিক সাদৃশ্য ।

  1. SAARC কী ?

উঃ – পুরো অর্থ – South Asian Association For Regional Co-Operation বা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা পরিষদ ।

স্থাপন – 8 ডিসেম্বর, 1985 খ্রিস্টাব্দ ।

সদস্য দেশ – ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ (8টি) ।

সদর দপ্তর – নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু ।

  1. ভারতকে উপমহাদেশ বলা হয় কেন ?

উঃ – এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণাংশে ভারতসহ পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ভূ-প্রাকৃতিক, জলবায়ু, আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সাদৃশ্য দেখা যায় । 6 টি দেশের মধ্যে একেবারে মধ্যভাগে অবস্থিত ভারতের ক্ষেত্রমান, জনসংখ্যা এবং প্রভাব প্রতিপত্তি সবচেয়ে বেশি । ভারত হল এই অঞ্চলটির মূলচালিকা শক্তি । তাই এই অঞ্চলকে ভারতীয় উপমহাদেশ বলা হয় ।

  1. ভারতের সীমান্তরেখার বিভিন্ন নাম লেখ ?

উঃ –

সীমান্ত রেখা

রাষ্ট্র

ম্যাকমোহন লাইন অরুণাচল প্রদেশে ভারত – চিন
র‍্যাডক্লিফলাইন ভারত – পাকিস্তান
ডুরান্ড লাইন ভারত – আফগানিস্তান
Line of Control [LOC] ভারত – পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর
Line of Actual Control [LAC] ভারত – চিন অধিকৃত কাশ্মীর
24° প্যারালাল ভারত – পাকিস্তান (পাক দাবি)
28° প্যারালাল ভারতীয় কাশ্মীর – পাকিস্তানের কাশ্মীর
  1. ভারতের রাজ্য পুনর্গঠনের ভিত্তিগুলি কী কী ?

উঃ – ভারতের রাজ্য পুনর্গঠনের ভিত্তিগুলি হল –

i) ভাষা – বহু ভাষার দেশ ভারতে 122 টি প্রধান ভাষা এবং 22 টি সংবিধান স্বীকৃত ভাষা আছে । তাই মূলত আঞ্চলিক ভাষার ভিত্তিতেই রাজ্য ভাগ করা হয়েছে ।

যেথা – অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু ।

ii) উন্নয়ন পরিকল্পনা – সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন ঘটানো ও পরিকল্পনা গ্রহনের জন্য উত্তরাখন্ড, ছত্তিশ গড়ের জন্ম হয় ।

iii) প্রশাসনিক সুবিধা – সুবিশাল রাজ্যের প্রশাসনিক কাজ কর্মচালানোর জটিলতার জন্য রাজ্য পুনর্গঠন করা হয় ।

যেমন – উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ত্রিপুরা ।

iv) সংস্কৃতি – সামাজিক, আচার-অনুষ্ঠান, সংস্কারের পার্থক্যের জন্য একই ভাষা সত্ত্বেও রাজ্য গঠন করা হয়েছে ।

যেমন – ঝাড়খন্ড, উত্তরাখণ্ড ।

v) প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক – অভিন্ন প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক পরিবেশের জন্য রাজ্য গঠন করা হয় ।

  1. ভারতের ভূপ্রাকৃতিক বিভাগগুলি কী কী ?

উঃ – ভূতাত্ত্বিক গঠন ও ভূমিরূপের বৈশিষ্টানুসারে ভারত কে 5টি প্রধান ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়, যথা –

i) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল

ii) বৃহৎ সমভূমি অঞ্চল

iii) উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল

iv) উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল

v) দ্বীপ অঞ্চল

  1. ভারতের আয়তন লেখ

উঃ – 32 লক্ষ 87 হাজার 782 বর্গকিমি ।

  1. আয়তনে পৃথিবীতে ভারতের স্থানসপ্তম
  2. জনসংখ্যা (2011) – 121 কোটি 1 লক্ষ 93 হাজার 4 শত 22 জন ।
  3. ভারতের উত্তরতম বিন্দুকাশ্মীরের ইন্দিরা কল ।
  4. ভারতের দক্ষিণতম বিন্দুআন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ইন্দিরা পয়েন্ট ।
  5. ভারতের মূল ভূখন্ডের দক্ষিণতম বিন্দুকন্যাকুমারিকা অন্তরীপ ।
  6. ভারতের পূর্বতম বিন্দুঅরুণাচল প্রদেশের কিবিথু ।
  7. ভারতের পশ্চিমতম বিন্দুগুজরাটের গুহার মোটা ।
  8. ভারতের প্রমান দ্রাঘিমারেখা82°30′ পূর্ব ।
  9. ভারতের নবীনতম রাজ্যতেলেঙ্গানা ।
  10. ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে বৃহত্তমআয়তনে রাজস্থান, জনসংখ্যায় উত্তরপ্রদেশ, জনঘনত্বে বিহার ।
  11. ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে ক্ষুদ্রতমআয়তনে গোয়া, জনসংখ্যায় সিকিম, জনঘনত্বে অরুণাচল প্রদেশ ।
  12. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে বৃহত্তমআয়তনে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, জনসংখ্যায় ও জনঘনত্বে দিল্লি ।
  13. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে ক্ষুদ্রতমআয়তনে ও জনসংখ্যায় লাক্ষাদ্বীপ, জনঘনত্বে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ।
  14. ভারতের প্রথম ভাষাভিত্তিক রাজ্যঅন্ধ্রপ্রদেশ ।
  15. ভারতের বৃহত্তম জেলাকচ্ছ ।
  16. ভারতের ক্ষুদ্রতম জেলামাহে ।
  17. ভারতের রাষ্ট্রীয় ভাষাহিন্দি ।
  18. ভারতের প্রধান সংযোগ কারী ভাষা – ইংরেজি ।
  19. ভারতের সংবিধান স্বীকৃত ভাষা 22 টি ।
  20. ভারতের মোট জেলা সংখ্যা 683 টি ।
  21. সর্বাধিক জেলার সংখ্যাবিশিষ্ট রাজ্যউত্তরপ্রদেশ (72টি) ।
  22. সর্বনিম্ন জেলার সংখ্যাবিশিষ্ট রাজ্য সিকিম (4টি) ।
  23. অর্থনৈতিক রাজধানী ও ভারতের প্রবেশদ্বার মুম্বাই ।
  24. ভারতের সর্বাধিক সাক্ষরতার হারকেরালা ।
  25. ভারতের সর্বনিম্ন সাক্ষরতার হারবিহার ।
  26. ভারতের পূর্ব পশ্চিম দ্রঘিমারেখার মধ্যে সময়ের পার্থক্য 1 ঘন্টা 56 মিনিট বা প্রায় 2 ঘন্টা ।
  27. ভারতের উল্লেখযোগ্য প্রণালী

উঃ –

প্রনালী

অবস্থান

i) গ্রেট চ্যানেল আন্দামান ও নিকোবর, ইন্দোনেশিয়া
ii ) 10° চ্যানেল আন্দামান ও নিকোবর
iii) 9° চ্যানেল মিনিকয় ও লাক্ষাদ্বীপ
iv) 8° চ্যানেল মালদ্বীপ ও মিনিকয়
v) মান্নার উপসাগর ও পক প্রনালী ভারত ও শ্রীলঙ্কা
  1. দুন কাকে বলে ?

উঃ – শিবালিক পর্বতের উত্তরে যে সমতল অনুদৈর্ঘ্য উপত্যকা সৃষ্টি হয়েছে উত্তরাখন্ডের স্থানীয় ভাষায় তাকে দুন বলে ।

উৎপত্তি – শিবালিকের উত্থানের পরে হিমাদ্রি ও হিমাচল থেকে আগত নদীগুলি রুদ্ধ হয়ে হ্রদ সৃষ্টি করে এবং ক্ষতিয় পদার্থ জমা হতে থাকে । পরে নদীগুলি শিবালিক কেটে দক্ষিণে প্রবাহিত হলে এদের জল সরে গিয়ে প্রশস্ত সমভূমি গঠন করে ।

উদাহরণ – দেরাদুন হল ভারতের বৃহত্তম দুন ।

  1. ছিটমহল কী ?

উঃ – ইংরেজ শাসনের অবসানের পর ভারত ভাগের সময় 8 টি থানা (পঞ্চগর, ডিমলা, দেবীগঞ্জ, পাটগ্রাম, হাতিবাঁধা, লাল মনির হাট, ফুলবাড়ি ও ভূরাঙ্গামারি ) এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে চলে যায় অর্থাৎ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং বাংলাদেশের কিছু ভূখন্ড ভারতে চলে আসে । এই জমিগুলি হল ছিটমহল ।

  1. কাশ্মীর উপত্যকা কাকে বলে ?

উঃ – জম্বু কাশ্মীর রাজ্যের পিরপাঞ্চল ও জাস্কর পর্বতের মাঝে বিশ্ব বিখ্যাত হ্রদ সমভূমিকে কাশ্মীর উপত্যকা বলে ।

বৈশিষ্ট্য

i) এটি 135 কিমি দীর্ঘ 40 কিমি প্রশস্ত 4921 বর্গকিমি ক্ষেত্র যুক্ত ।

ii) ডাল, উলার হ্রদ, বরফাবৃত শৃঙ্গ, পপলার চিনার বিক্ষেপ, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য এটি ভূস্বর্গ নামে বিশ্ব বিখ্যাত ।

উৎপত্তি – প্রাচীনকালে এখানে হ্রদ ছিল যা নদী ও হিমবাহ দ্বারা ভরাট হয়ে সমভূমিটি সৃষ্টি হয় । উপত্যকার 100 – 200 মিটার উঁচু ভূমিটিতে যে ধাপযুক্ত উর্বর পলিস্তর সৃষ্টি হয়েছে , তা কারেওয়া নামে পরিচিত । এতে জাফরান চাষ প্রসিদ্ধ ।

  1. আকসাইচিন কী ?

উঃ – চিন অধিকৃত কাশ্মীরে কারকোরামের উত্তর -পূর্বে পর্বত বেষ্টিত উঁচু মালভূমি হল আকসাইচিন । উচ্চতা 4500 মিটারেরও বেশি । লবণাত্মক হ্রদ লিং জিটান আছে ।

  1. সোডা সমভূমি কী ?

উঃ – জম্বু কাশ্মীরের উত্তর -পূর্বে আকসাইচিন মালভূমির উত্তরে প্রায় সমতল উচ্চভূমি হল সোডা সমভূমি । এটি চিন অধিকৃত ।

  1. মরুস্থলী শব্দের অর্থ কী ? এই প্রকার নামকরণের কারণ কী ?

উঃ – ‘মরু’ শব্দের অর্থ মৃত ও ‘স্থলী’ শব্দের অর্থ দেশ । অর্থাৎ মৃতের দেশ ।

এই মরুস্থলীটি ভারতীয় মরুভূমির সর্ব পশ্চিমে অবস্থিত । এই অঞ্চলে মাইলের পর মাইল জুড়ে ছড়িয়ে আছে ।শুধু বালি আর বালি । কোথাও সবুজের কোনো চিহ্ন নেই । অতি অল্প বৃষ্টিপাতের কারনে এই অঞ্চলে জীবনের অস্তিত্ব প্রায় নেই বলে এই অঞ্চলটির নাম মরুস্থলী বা মৃতের দেশ নামকরণ হয়েছে ।

  1. ডেকানট্র্যাপ কী ?

উঃ – উপদ্বীপীয় মালভূমির উত্তর -পশ্চিমাংশে ব্যাসল্ট লাভা গঠিত ও পূর্বাংশে ধাপযুক্ত অঞ্চলকে ডেকানট্র্যাপ বলে ।

উৎপত্তি – ক্রেটাসিয়াস থেকে ইয়োসিন যুগে কয়েককোটি বছর আগে বিদার অগ্ন্যুৎপাতে তরল ব্যাসল্ট লাভা চাদরের আকারে জমা হয়ে সৃষ্টি হয় ।

বৈশিষ্ট্য –

i) ক্ষেত্রমান প্রায় 5 লক্ষ বর্গকিমি ।

ii) লাভা স্তর পূর্বে 150 মিটার থেকে পশ্চিমে 3000 মিটার গভীর ।

iii) লাভা নির্গমনে বিরতির জন্য পূর্ব দিক সিঁড়ির মতো ধাপযুক্ত ।

  1. তাল কী ? উদাহরণ দাও ?

উঃ – ক্ষুমায়ন হিমালয়ে হিমবাহ ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে অসংখ্য অবনমিত অংশের সৃষ্টি হয় । পরবর্তীকালে এই অবনমিত অংশগুলিতে জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয় । এই হ্রদগুলিকে স্থানীয় ভাষায় তাল বলে ।

যেমন – সাততাল, ভিমতাল, পুনাতাল, নৈনিতাল ।

51. পূর্ব হিমালয় ও পশ্চিম হিমালয়ের মধ্যে পার্থক্য লেখ  ?

উঃ –

বিষয়

পূর্ব হিমালয়

পশ্চিম হিমালয়

i) বিস্তার এটি সিঙ্গালীলা পর্বত থেকে নামচাবারওয়া শৃঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত । এটি নাঙ্গাপর্বত থেকে কালি নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ।
ii) শিবালিক পূর্ব হিমালয়ে শিবালিক পর্বতের অস্তিত্ব নেই । পশ্চিম হিমালয়ে শিবালিক পর্বতের অবস্থান সুস্পষ্ট ।
iii) ঢাল দক্ষিণ থেকে উত্তরে উচ্চতা হঠাৎ বাড়ায় খাড়া ঢাল যুক্ত । দক্ষিণ থেকে উত্তরে উচ্চতা ধীরে বৃদ্ধি পাওয়ায় মৃদু ঢাল ।
iv) পর্বত এখানে পর্বত, শৃঙ্গ, হিমবাহের সংখ্যা খুব কম ।

যথা – সিঙ্গালিলা, দার্জিলিং পর্বত, কাঞ্চনজঙ্ঘা, নামচা বারওয়া শৃঙ্গ।

এখানেপর্বত, শৃঙ্গ, হিমবাহের সংখ্যা অনেক বেশি ।

যথা – লাদাখ, কারাকোরাম, জাস্করপর্বত, k2, কামেট শৃঙ্গ।

  1. হিমালয় পর্বতমালাকে কী কী অঞ্চলে ভাগ করা হয় ?

উঃ – দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয় পর্বত মালাকে 3টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়,

যথা – i) পশ্চিম হিমালয়

ii) মধ্য হিমালয়

iii) পূর্ব হিমালয়

প্রস্থ বরাবর হিমালয় পর্বত মালাকে 4 ভাগে ভাগ করা হয়,

যথা – i) টেথিস হিমালয়

ii) হিমাদ্রি হিমালয়

iii) হিমাচল হিমালয়

iv) শিবালিক হিমালয়

  1. দুন কাকে বলে ?

উঃ – হিমালয়ের পাদদেশের অংশই শিবালিক । 10-50 কিমি প্রশস্ত ও গড়ে 600 মিটার উচ্চ অংশটি পূর্বে সৃষ্টি হওয়া হিমাদ্রি ও হিমাচল থেকে নদী প্রবাহিতপলি, বালি, প্রস্তর-কণা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয়েছে । শিবালিকের দক্ষিণ ঢাল খাড়া, উত্তর দিকের ঢাল ঢালু হয়ে নেমে গেছে সমতল উপত্যকায় । এগুলিকেই দুন বলে ।

যেমন – দেহরাদুন (বৃহত্তম), রাজৌলি দুন, চৌখম্বা দুন, পতৌতি দুন । অঞ্চলগুলি উর্বর বলে কৃষি সমৃদ্ধ ।

  1. ভারত এশিয়ার দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ কোথায় নির্মান করা হয়েছে ?

উঃ – বানিহালে এশিয়ার দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ জওহর টানেল নির্মান করা হয়েছে ।

  1. ভূস্বর্গ কাকে বলে ?

উঃ – কোলাহোই পর্বত শৃঙ্গের পূর্বে হিন্দু দের তীর্থস্থান অমরনাথ গুহা অবস্থিত । এখানকার হিমাদ্রি ও পিরপাঞ্জালের মধ্যে 150 কিমি দীর্ঘ 380 কিমি প্রশস্ত কাশ্মীর উপত্যকাকে প্রাকৃতির সৌন্দের্যের জন্য তাকে ভূস্বর্গ বলে ।

  1. ভারতের বৃহত্তম মিষ্টি জলের হ্রদের নাম লেখ ?

উঃ – ডাল ও উলার মিষ্টি জলের হ্রদ ।

  1. ডোবা খোলা বা বাদুড়ের গুহা কাকে বলে ?

উঃ – পূর্ব-পশ্চিমে 240 কিমি দীর্ঘ ও উত্তর-দক্ষিণে 97 কিমি প্রশস্ত । এখানকার গারো পাহাড় (সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নুরুরেক – 1,412 মিটার), খাসিয়া পাহাড় (সর্বোচ্চ শৃঙ্গ শিলং পাহাড় – 1,961 মিটার) ও জয়ন্তিয়া উল্লেখযোগ্য । এই মালভূমিতে পার্বত্য গুহা আছে । গারো পাহাড়ের সিজু (1,900 মিটার দীর্ঘ), গুহাটি বিখ্যাত । একে স্থানীয় ভাষায় ডোবা খোলা বা বাদুড়ের গুহা বলে ।

  1. ঘগগর কাকে বলে ?

উঃ – ঘগগর :- ভারতের মরু অঞ্চলটি পাঞ্জাব সমভূমির দক্ষিণে রাজস্থান রাজ্যের আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে অবস্থিত । এটি সিন্ধু-গঙ্গা সমভূমির শুষ্ক অঞ্চল । এক সময় শতদ্রু, সরস্বতী, দৃশদবতী নদী এখানে প্রবাহিত ছিল । সরস্বতী নদীর শুষ্ক খাত এখনও রয়েছে । একেই ঘগগর বলে ।

  1. ভূপ্রকৃতি অনুসারে মরু অঞ্চলকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ?

উঃ – শ্রেণিবিভাগ – ভূপ্রাকৃতিক তারতম্য অনুসারে মরু সমভূমিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-

i) বাগর :- মরুভূমির পুর্বদিকে আরাবল্লি পর্বতের পাদদেশের অংশটি বাগর নামে পরিচিত ।

ii) রোহি :- আরাবল্লির পশ্চিমের নদীবিধৌত উর্বর প্লাবনভূমি অঞ্চল হল রোহি ।

iii) ক্ষুদ্র মরু :- রোহির পশ্চিম প্রান্তের অংশ হল ক্ষুদ্র মরু অঞ্চল ।

iv) হামাদা :- ক্ষুদ্র মরুর পশ্চিম প্রান্তে বালি ও শিলাখন্ড দ্বারা গঠিত অঞ্চল হল হামাদা ।

v) মরুস্থলী :- হামাদার পশ্চিমের অঞ্চলটি সম্পূর্ণ বালুকাময়, রুক্ষ ও উদ্ভিদহীন অঞ্চল । এটিই হল আসল থর মরুভূমি । মরুস্থলীতে বহু বালিয়াড়ি দেখা যায় । এগুলিকেই ধ্রিয়ান বলে । ধ্রিয়ান শব্দের অর্থ অস্থিতিশীল বা চলমান ।

  1. বীহড় কাকে বলে ?

উঃ – পূর্ব রাজস্থান উচ্চভূমির পুর্বে অবস্থিত অঞ্চলটি উত্তর -পূর্বে ঢালু । চম্বল এখান কার প্রধাননদী । চম্বল অঞ্চলের এবড়ো খেবড়ো ভূমিকে বীহড় বলে ।

  1. ময়দান বা মালনাদ কাকে বলে ?

উঃ – মহারাষ্ট্র মালভূমির দক্ষিণে এই মালভূমি অবস্থিত । এই মালভূমির উত্তর-পূর্বাংশ কিছুটা কম উচ্চ । একে ‘ময়দান’ বলে । কর্ণাটক মালভূমির দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশ অধিক উচ্চ । একে ‘মালনাদ’ বলে ।

  1. নীলগিরির কুন্ডা কাকে বলে ?

উঃ – পূর্বঘাট, পশ্চিম ঘাট ও দক্ষিণ ঘাট পর্বত শ্রেণীর মিলন ক্ষেত্রে নীলগিরি অবস্থিত । দোদাবেতা, মাকুর্তি নীলগিরির প্রধান শৃঙ্গ । নীলগিরির দক্ষিণ-পশ্চিমাংশকে কুন্ডা বলে ।

  1. দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম কী ?

উঃ – পশ্চিম ঘাটের আনাইমুদি ।

  1. পূর্ব উপকূল সমভূমিকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী ?

উঃ – পূর্ব উপকূল সমভূমিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –

i) উত্তর সরকার উপকূল

ii) করমণ্ডল উপকূল

i) উত্তর সরকার উপকূল :- এই উপকূলের উত্তরাংশের সুবর্ণ রেখার মোহনা থেকে কৃষ্ণা নদীর মোহনা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে উত্তর সরকার উপকূল বলে ।

ii) করমণ্ডল উপকূল :- এই উপকূল কৃষ্ণা নদীর মোহনা থেকে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত দক্ষিণাংশের উপকূলকে করমণ্ডল উপকূল বলে ।

  1. থেড়িস কাকে বলে ?

উঃ – পুলিকট হ্রদ থেকে কন্যাকুমারীকা অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত । উপকূলটি 100 কিমি চওড়া । এখানে কাবেরী নদীর বদ্বীপ আছে । এই উপকূলে বহু বালিয়াড়ি দেখা যায় । এগুলিকে স্থানীয় ভাষায় থেড়িস বলে ।

  1. কয়াল কাকে বলে ?

উঃ – কেরল রাজ্যের এই উপকূল গড়ে 25 কিমি প্রশস্ত এখানে শৈলশিরা দেখা যায় । এখানে বহু লেগুন বা ব্যাকওয়াটার দেখা যায় । স্থানীয় ভাষায় এগুলিকে কয়াল বলে । এখানে ভেম্বানাথ কয়াল বিখ্যাত ।

  1. পূর্ব উপকূল সমভূমি ও পশ্চিম উপকূল সমভূমির মধ্যে পার্থক্য লেখ

উঃ – পূর্ব উপকূল সমভূমি ও পশ্চিম উপকূল সমভূমির মধ্যে পার্থক্য –

বিষয়

পূর্ব উপকূল সমভূমি

পশ্চিম উপকূল সমভূমি

i) বিস্তার পূর্ব উপকূল সমভূমি চওড়া (গড় বিস্তার 100 – 200 কিমি)। পশ্চিম উপকূল সমভূমি সংকীর্ণ (গড় বিস্তার 60 – 75 কিমি)।
ii) দৈর্ঘ্য পূর্ব উপকূল কম দীর্ঘ (1500 কিমি) পশ্চিম উপকূল তুলনা মূলক বেশি (2500 কিমি)
iii) হ্রদ ও উপহ্রদ হ্রদ ও উপহ্রদের সংখ্যা কম (তবে চিল্কা হ্রদ উল্লেখযোগ্য) হ্রদ ও উপহ্রদের সংখ্যা বেশি (স্থানীয় নাম কয়াল)
iv) বদ্বীপ মহানন্দা, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী নদীতে বদ্বীপ আছে । নর্মদা ও তাপ্তি নদীতে বদ্বীপ সৃষ্টি হয়নি ।
v) সমুদ্র বন্দর উপকূল ভগ্ন নয় বলে বন্দরের সংখ্যা কম । উপকূল ভগ্ন বলে বন্দরের সংখ্যা বেশি ।
  1. ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ সমূহের গুরুত্ব আলোচনা কর ?

উঃ – ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এগুলি হল –

i) উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের গুরুত্ব :-

a) উত্তর ভারতের প্রায় সমস্ত নদীই এই পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়েছে এবং এদের পলি দিয়েই ভারতের বিশাল সমভূমি গঠিত হয়েছে ।

b) হিমালয়ের বনভূমি ভারতের সম্পদ ।

ii) উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের গুরুত্ব :-

a) সমভূমি বলে পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ।

b) নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বহু শহর-নগরের বিস্তার ঘটেছে ।

iii) উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চলের গুরুত্ব :-

a) মালভূমি বলে উপদ্বীপীয় নদীগুলির খরস্রোত; জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী ।

b) লাভা গঠিত কালো মাটি তুলা, গম ও আখ চাষের উপযোগী ।

iv) উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের গুরুত্ব :-

a) পূর্ব উপকূল প্রশস্ত ও পলিগঠিত । ফলে কৃষি সহায়ক অধিবাসীর কৃষি জীবি ।

b) পূর্ব উপকূলের নদীগুলি নাব্য বলে পরিবহন ও মৎস্য শিকারের উপযোগী ।

v) দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চলের গুরুত্ব :-

a) আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বিশাল বনভূমিতে কাষ্ঠ সম্পদ আহরন ও কাষ্ঠ শিল্পের সঙ্গে বহু লোক নিযুক্ত ।

b) দ্বীপপুঞ্জে প্রচুর নারকেল গাছ থাকায় এর সঙ্গে বহু লোক যুক্ত ।

  1. বেট কাকে বলে ?

উঃ – পূর্বে যমুনা ও পশ্চিমে শতদ্রু নদীর মধ্য ভাগে পাঞ্জাব সমভূমি অবস্থিত । শতদ্রু ও ইরাবতী নদী বাহিত পলি সঞ্চয়ে এই সমভূমিটির উৎপত্তি হয়েছে । পাঞ্জাব সমভূমির নবীন পলি মৃত্তিকা বেট নামে পরিচিত ।

  1. ভাঙর ও খাদেরের মধ্যে পার্থক্য লেখ

উঃ – ভাঙর ও খাদেরের মধ্যে পার্থক্য :-

পার্থক্যের বিষয়

ভাঙর

খাদার

i) অবস্থান উচ্চ গঙ্গা সমভূমির নদী থেকে দূরবর্তী অঞ্চলের পলি গঠিত কিছুটা উঁচু সমতল ভূমি । উচ্চ গঙ্গা সমভূমির নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের পলি গঠিত কিছুটা নীচু সমতল ভূমি ।
ii) প্রাচীনত্ব এই পলি মাটি বয়েসে প্রাচীন । এই পলিমাটি বয়েসে নবীন ।
iii) উপাদান এই মাটিতে চুন জাতীয় পদার্থ বেশি থাকে । এই মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকে ।
iv) উর্বরতা এই মাটির উর্বরতা কম । এই মাটির উর্বরতা বেশি ।
v) বন্যা ও পলি সঞ্চয় বন্যার প্রকোপ কম বলে এখানে পলি সঞ্চয়ের পরিমাণ ও কম । বন্যার প্রকোপ বেশি বলে প্রতিবছর বন্যায় এখানে নতুন পলি সঞ্চয় ঘটে
vi) পরিচিতি উত্তরপ্রদেশে ‘খাদার’ এবং পাঞ্জাবে ‘ধায়া’। পাঞ্জাবে ‘বেট’।
  1. উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

উঃ – উত্তরের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল ও দক্ষিণের উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্য ভাগে অবস্থান করেছে উত্তরের বিশাল সমভূমি । সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র নদী অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই সমভূমিটি ভারত তথা বিশ্বের বৃহত্তম সঞ্চয়জাত সমভূমি ।

ভূপ্রকৃতি – ভূপ্রকৃতি সমতল ও বৈচিত্রহীন । ভূপ্রকৃতির তারতম্য অনুসারে পূর্বে এই অঞ্চল ভাবর, তরাই, ভাঙ্গর, খাদার এই চার ভাগে ভাগ করা হত ।

শ্রেণি বিভাগ – ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য অনুসারে উত্তরের সমভূমি অঞ্চলকে চারটি ভাগে ভাগ কারা হয়, যথা –

i) ব্রহ্মপুত্র সমভূমি :- সমগ্র অসম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ ও তার উপনদীর পলি জমে এই সমভূমি সৃষ্টি হয়েছে । দৈর্ঘ্য প্রায় 750 কিমি, বিস্তার 80 কিমি । এখানে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে পৃথিবীর বৃহত্তম নদী মধ্যবর্তী মাজুলি দ্বীপে গড়ে উঠেছে ।

ii) গঙ্গা সমভূমি :- যমুনা নদী থেকে বাংলাদেশ সীমানা পর্যন্ত উত্তরে সমভূমির বৃহৎ অঞ্চলটি উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত । আয়তন প্রায়75 লক্ষ বর্গকিমি । গঙ্গা সমভূমিকে তিনটি উপ-অঞ্চলে ভাগ করা হয়, যথা –

গঙ্গা সমভূমি

উচ্চ গঙ্গা সমভূমি

মধ্য গঙ্গা সমভূমি

নিম্ন গঙ্গা সমভূমি

পশ্চিমে যমুনা নদী থেকে পূর্বে এলাহাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত । এই সমভূমি গঙ্গা যমুনা দোয়াব, রোহিল খন্ড সমভূমি, অযোধ্যা ও যমুনা পার সমভূমি নিয়ে গঠিত । এলাহাবাদ থেকে পূর্বে রাজমহল পাহাড় পর্যন্ত মধ্য গঙ্গা সমভূমি প্রায় 600 কিমি দীর্ঘ, উচ্চতা 100 মিটার । এখানে ভাঙ্গার ও খাদার রয়েছে । রাজমহল পাহাড় থেকে বঙ্গোপসাগর মোহনা পর্যন্ত দার্জিলিং ও পুরুলিয়া বাদে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে সমভূমিটি বিস্তৃত ।

iii) পাঞ্জাব সমভূমি :- পূর্বে যমুনা নদী থেকে পশ্চিমে শতদ্রু ও বিপাশা নদীর অববাহিকা পর্যন্ত বিস্তৃত এই সমভূমি সিন্ধুর উপনদী বিতস্তা, ইরাবতী, বিপাশা, চন্দ্রভাগা ও শতদ্রুর পলি সঞ্চয়ে গঠিত ।

বৈশিষ্ট্য

a) দোয়াব – এখানকার নদী মধ্যবর্তী সমভূমিকে দোয়াব বলে ।

b) ধায়া ও বেট – প্রাচীন প্লাবন সমভূমিকে ধায়া ও নবীন গঠিত অঞ্চলকে বেট বলে ।

c) খোস বা চোস – উত্তরের ক্ষয়প্রাপ্ত অঞ্চলকে খোস বা চোস বলে ।

iv) ভারতীয় মরু সমভূমি :- ভারতের পশ্চিমে রাজস্থান রাজ্যের পশ্চিম দিকে থর মরুভূমির ভারতের অংশটি ভারতীয় মরু বা মরুস্থলী বা মৃতের দেশ নামে পরিচিত । বালি, পাথর, কাঁকড় পূর্ণ এই অঞ্চলের আয়তন প্রায়75 লক্ষ বর্গকিমি । অঞ্চলটি ক্ষুদ্র পাঁচটি উপঅঞ্চলে বিভক্ত ।

যথা – a) বাগার – একেবারে পূর্বপ্রান্তে আরাবল্লি পর্বতের পাদদেশে স্বল্প পলি যুক্ত তৃণ অঞ্চল হল বাগার ।

b) রোহি – আরাবল্লির পশ্চিমাংশে যে প্লাবন ভূমি সেটিই রোহি ।

c) থালি – রোহির পশ্চিমাংশে সংকীর্ণ বালিময় সমভূমি হল থালি ।

d) হামাদা – শিলা বা প্রস্তরময় মরু ভূমি হামাদা ।

e) আর্গ – পশ্চিম সীমান্তে বালুকা ময় মরুভূমি হল আর্গ ।

  1. প্রস্থ অনুযায়ী হিমালয়ের শ্রেণিবিভাগ করে যে কোনো দুটি ভাগের বিবরণ দাও ?

উঃ – হিমালয় পর্বতটি বিভিন্ন উচ্চতার চারটি সমান্তরাল পর্বত শ্রেণির সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে । দক্ষিণ থেকে উত্তরে বা প্রস্থ বরাবর চারটি পর্বতশ্রেণি হল –

i) শিবালিক হিমালয়

ii) হিমাচল হিমালয় বা অবহিমালয়

iii) হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয়

iv) টেথিস হিমালয় বা তিব্বতীয় হিমালয়

টেথিস হিমালয় :- বাংলায় একে হিমালয় ওর অঞ্চল বলে । হিমাদ্রির উত্তরে ট্রান্স বা টেথিস বা তিব্বতীয় হিমালয় অবস্থিত ।

বৈশিষ্ট্য

a) উৎপত্তি কাল – আজ থেকে প্রায় 7 কোটি বছর আগে উৎপত্তি হয় ।

b) বিস্তার ও উচ্চতা – প্রকৃত পক্ষে এটি তুষার মালভূমি । প্রস্থ প্রায় 40 কিমি, দৈর্ঘ্য প্রায় 1000 কিমি এবং গড় উচ্চতা 5500-6000 মিটার ।

c) উল্লেখযোগ্য পর্বত শৃঙ্গ – এই অংশে জাস্কর পর্বত শ্রেণি অবস্থিত । এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ লিওপারগেল । এছাড়া ও লাদাখ, কৈলাস ও কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি এবং আখসাইচিন মালভূমি আছে ।

হিমাদ্রি হিমালয় :- হিমাচল হিমালয়ের উত্তরে অবস্থান করেছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয় বা হিমগিরি । এটি মূলত গ্রানাইট ও নীস শিলা দ্বারা গঠিত ।

বৈশিষ্ট্য

a) উৎপত্তি কাল – প্রায় 7-12 কোটি বছর আগে ।

b) বিস্তার ও গড় উচ্চতা – গড় বিস্তার 25 কিমি, গড় উচ্চতা 6000 মিটারের ও বেশি ।

c) উল্লেখযোগ্য পর্বত শৃঙ্গ – পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট, তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্জনজঙ্ঘা, মাকালু, ধবলগিরি, নন্দাদেবী, কামেট প্রভৃতি উচ্চতম শৃঙ্গগুলি অবস্থিত ।

  1. ভারতের উপকূলীয় সমভূমির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

উঃ – উপদ্বীপীয় মালভূমির দু-পাশে উপকূল বরাবর যে সংকীর্ণ উপকূল সমভূমি গড়ে উঠেছে, তাকে উপকূলীয় সমভূমি বলা হয় । এই উপকূলীয় সমভূমিকে 2 ভাগে ভাগ করা হয়, যথা –

i) পূর্ব উপকূলীয় সমভূমি :– এই সমভূমির প্রধান তিনটি বিভাগ রয়েছে, যথা –

a) উপকূল সমভূমি – ওড়িশায় মূলত মহানদীর বদ্বীপ অংশে প্রায় 400 কিমি দীর্ঘ এই সমভূমি দেখা যায় ।

b) অন্ধ্র সমভূমি – উৎকল সমভূমির দক্ষিণে ও পুলিকট হ্রদ পর্যন্ত বিস্তৃত ।

c) তামিলনাড়ু সমভূমি – পুলিকট হ্রদ থেকে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত বিস্তৃত । একে দক্ষিণ ভারতের শষ্য ভান্ডার বলা হয় ।

ii) পশ্চিম উপকূলের সমভূমি :- এই সমভূমির প্রধান ছয়টি ভাগ রয়েছে, যথা –

a) কচ্ছের রণ – গুজরাটের উত্তরে প্রায় 73600 বর্গকিমি স্থান জুড়ে অবস্থিত । অগভীর জলাভুমি রণ নামে পরিচিত ।

b) কচ্ছ উপদ্বীপ – রণের দক্ষিণে কচ্ছ উপদ্বীপ অবস্থিত । কচ্ছ শব্দের অর্থ হল জলময় দেশ ।

c) কাথিয়া বাড় উপদ্বীপ – কচ্ছ উপদ্বীপের দক্ষিণাংশে এই অঞ্চল অবস্থিত । এখানে গির, গিরনার, ওসম প্রভৃতি পাহাড় দেখা যায় ।

d) গুজরাট সমভূমি – কাথিয়া বাড়ের দক্ষিণে সবরমতী, মাহি, নর্মদা নদী বাহিত পলি দ্বারা এই সমভূমি গঠিত ।

e) কোঙ্কন উপকূল সমভূমি – গুজরাট সমভূমি থেকে দক্ষিণে গোয়া পর্যন্ত এই সমভূমি 500 কিমি দীর্ঘ এই সমভূমি খুবই ভগ্ন ও সংকীর্ণ ।

f) কর্ণাটক উপকূলীয় সমভূমি – গোয়া থেকে ম্যাঙ্গালর পর্যন্ত এই সমভূমিটি বিস্তৃত ।

  1. পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রকৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

উঃ – পশ্চিম হিমালয় :- এই হিমালয় পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বত থেকে পূর্বে নেপালের পশ্চিম সীমানায় অবস্থিত কালি নদী পর্যন্ত বিস্তৃত । পশ্চিম হিমালয়কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।

যথা –

i) কাশ্মীর হিমালয় – জম্বু ও কাশ্মীরের প্রায় 5 লক্ষ বর্গ কিমি জুড়ে এর অবস্থান ।

a) শিবালিকের জম্বু ও পুঞ্চ পাহাড়, b) পিরপাঞ্চাল, c) জাস্কর পর্বত, d) লাডাক, ও e) কারাকোরাম পর্বত শ্রেণি কাশ্মীর হিমালয়ে অবস্থিত ।

ii) পাঞ্জাব ও হিমাচল হিমালয় – পাঞ্জাব ও হিমাচল প্রদেশের প্রায় 64 হাজার বর্গ কিমি জুড়ে এই হিমালয় অবস্থিত । ধাওলাধার, নাগটিব্বা, মুসৌরি এখানকার প্রধান শৈলশিরা ।

iii) কুমায়ুন হিমালয় – উত্তরাখন্ডে রাজ্যের প্রায় 4600 বর্গ কিমি জুড়ে এটি অবস্থান করেছে । এখানকার প্রধান পর্বত শ্রেণি হল – শিবালিক, হিমাচল ও হিমাদ্রি । শিবালিক ও হিমাচলের মাঝে দুন উপত্যকা অবস্থিত । এখানে যে সব হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ দেখা যায় তাদের তাল বলে ।

যেমন – নৈনিতাল, ভীমতাল, সাততাল ও পুনাতল প্রভৃতি ।

  1. দাক্ষিণাত্য মালভূমির অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য লেখ । / দাক্ষিণত্য মালভূমির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও । / দাক্ষিণাত্য মালভূমির ভূপ্রকৃতি আলোচনা কর ।

উঃ – দাক্ষিণাত্য মালভূমি :- উত্তরে বিন্ধ্য পর্বত, পূর্বে পূর্ব ঘাট পর্বত ও পশ্চিমে পশ্চিম ঘাট পর্বত দ্বারা বেষ্টিত মালভূমি অঞ্চলটি দাক্ষিণাত্য মালভূমি নামে পরিচিত । ভারতের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন এই ভূখন্ডটি গন্ডোয়ানা ল্যান্ডের অংশ বিশেষ । এই অঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে । যথা-

i) পার্বত্য অংশ – এই অঞ্চলকে আবার 3 ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা –

a) উত্তরের পার্বত্য সমূহ – এই পর্বত শ্রেণির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমর কন্টক (1057 মিটার) ।

b) পশ্চিমঘাট পর্বত বা সহ্যাদ্রি – এই পর্বত শ্রেণির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ভাভুলমালা (2339 মিটার) ।

c) পূর্বঘাট পর্বত বা মলয়াদ্রি – এই পর্বত শ্রেণির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বিলিগির রঙ্গন (1750 মিটার) ।

ii) মালভূমি অংশ – দাক্ষিণাত্য অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য মালভূমি গুলি হল –

a) মহারাষ্ট্র মালভূমি – মহারাষ্ট্রের ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত বিশাল মালভূমি অঞ্চলটি ডেকান্ট্র্যাপ নামে পরিচিত ।

b) কর্ণাটক মালভূমি – ডেকান্ট্র্যাপের দক্ষিণে অবস্থিত এই ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির গড় উচ্চতা 450 মিটার ।

c) তেলাঙ্গানা মালভূমি – কর্ণাটক মালভূমির পূর্বে অন্ধ্রপ্রদেশের এই মালভূমিটি প্রধানত নীস শিলাদ্বারা গঠিত ।

দাক্ষিণাত্য মালভূমির বৈশিষ্ট্য :-

i) এটি প্রাচীন গন্ডোয়ানা শিন্ডের অবশিষ্ট্যাংশ,

ii) প্রাচীন ও কঠিন গ্রানাইট, ব্যাসল্ট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত ।

iii) মালভূমিটি উত্তর – পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ পূর্ব দিকে ঢালু এবং উত্তর – দক্ষিণে প্রায় 1700 কিমি দীর্ঘ,

iv) গড় উচ্চতা প্রায় 600 মিটারের কাছাকাছি,

v) এটি প্রধানত ক্ষয়প্রাপ্ত ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি ।

0 0 votes
Article Rating
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments