বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
- পৃথিবীর সবচেয়ে দূষণযুক্ত দেশ – চিন।
- ভারতে বিপজ্জ্বনক বর্জ্য আইন প্রচলিত হয় – 1989 সাল থেকে ।
- ভারতে প্রতিদিন – 0.1 লক্ষ টন পৌরসভার কঠিন বর্জ্য তৈরি হয় ।
- ভারতের মাথা পিছু – 0.2 কিগ্রা থেকে 0.6 কিগ্রা বর্জ্য তৈরি হয় ।
- ভারত বর্তমানে বর্জ্য উৎপাদনে – পৃথিবীতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে ।
- বিশ্ব পরিবেশ দিবস – 5ই জুন ।
- পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক দূষণ যুক্ত শহর হল – জাবল (ইরান) ।
- ভারতে সর্বাধিক দূষণযুক্ত শহর হল – গোয়ালিওর।
- ভারতের মধ্যে বর্জ্যের চাপ সবচেয়ে বেশি – কলকাতা শহরে ।
- কঠিন বিষাক্ত বর্জ্য – নিউক্লিয়ার রিয়াক্ট্যার ।
- কঠিন বিষহীন বর্জ্য – কাঁচের টুকরো ।
- তরল বর্জ্য – ডিটারজেন্ট ।
- গ্যাসীয় বর্জ্য – জীবাশ্ম জ্বলানি ।
- চিকিৎসা বর্জ্য – সিরিঞ্জ ।
- তেজস্ক্রিয় বর্জ্য – ট্রিসিয়াম – 3, রেডিয়াম – 226, কার্বন – 14 ।
- জৈব সার বা বায়ো ফার্টিলাইজার – জৈব বর্জ্য পদার্থের পচনের ফলে উৎপন্ন সারকে জৈব সার বা বায়ো ফার্টিলাজার বলে ।
- জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য – সাকসব্জি খাবারের অবশিষ্টাংশ ।
- জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য – প্ল্যাস্টিক, কাঁচ ।
- সেলুলোজ – কাগজ শিল্প থেকে উৎপন্ন বর্জ্য ।
- কম্পোস্টিং – জীবানু দ্বারা বর্জ্যের বিয়োজন পদ্ধতিকে কম্পোস্টিং বলে ।
- নিষ্কাশন – বর্জ্য জল শোধনের পদ্ধতিকে নিষ্কাশন বলে ।
- জমি ভরাট করণ – মাটিতে পুঁতে বর্জ্য অপসারণ পদ্ধতিকে জমি ভরাট করণ বলে ।
- কৃষি বর্জ্য – পেস্টিসাইড, কীটনাশক দ্রব্য ।
- পেট্রোকোক – তৈল শোধনাগার থেকে অসম্পূর্ণ দহনের ফলে উদ্ভুত কণাকে পেট্রোকোক বলে ।
- ফ্লাইয়্যাশ – কয়লা দহনে সৃষ্ট সূক্ষ্ম আনুবীক্ষনিক ভস্মকে ফ্লাইয়্যাশ বলে ।
- বর্জ্য – ব্যবহারের অযোগ্য, পরিত্যক্ত, কঠিন -তরল -গ্যাসীয় অবস্থায় প্রকৃতিতে পড়ে থাকা বস্তু যা পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারন, তাকে বর্জ্য বলে ।
যেমন – ভাঙা প্লাস্টিক, ছেঁড়া কাগজ, নোংরা জল ইত্যাদি ।
- আবর্জনা – যেসব বর্জ্য আর্দ্র, দুর্গন্ধ নির্গত হয়, পচনশীল তাদের আবর্জনা বলে । এতে 70% আর্দ্রতা থাকে।
যেমন – বর্জিত খাবার, সব্জির খোসা, মাছের আঁশ, ডিমের খোসা ইত্যাদি ।
- জঞ্জাল – যেসব বর্জ্য শুষ্ক, পচনশীল নয় সহজেই দাহ্য তাদের জঞ্জাল বলে । এতে 25% আর্দ্রতা থাকে ।
যেমন – প্লাস্টিক, পলিথিন, কাঁচ, বৈদ্যুতিক ভাঙা যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ।
- জৈব ভঙ্গুর ও অজৈব ভঙ্গুরের মধ্যে পার্থক্য লেখ ।
উঃ – জৈব ভঙ্গুর ও অজৈব ভঙ্গুরের মধ্যে পার্থক্য :-
বিষয় |
জৈব ভঙ্গুর |
অজৈব ভঙ্গুর |
i) সংজ্ঞা | যে সব জীবজাত বর্জ্য অনুজীবের ক্রিয়াশীলতায় বিনষ্ট হয় ও খুব সহজে মাটিতে মিশে যায়, তাদের জৈব ভঙ্গুর বা জীব বিশ্লেষ্য বর্জ্য বলে । | যে সব অজীবজাত বর্জ্য কোনো ভাবে পচে না এবং দীর্ঘদিন অপরিবর্তিত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকে, তাদের জৈব অভঙ্গুর বা জীব অবিশ্লেষ্য বর্জ্য বলে । |
ii) প্রকৃতি | এগুলি উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে সৃষ্টি হয় অর্থাৎ এরা জীব জাত। | এগুলি জড় বস্তু থেকে সৃষ্টি হয় অর্থাৎ এরা অজীবজাত। |
iii) অণুজীব | এগুলির সঙ্গে বিভিন্ন বিয়োজক ক্রিয়া করে পচন ঘটায় । | এদের সঙ্গে কোনো জীবানু ক্রিয়া করতে পারে না । কেবল মাত্র উচ্চচাপ ও তাপ দ্বারা এদের বিশ্লেষণ করা যায় । |
iv) পরিণতি | এগুলির জটিল অবস্থা থেকে সরল অবস্থায় পরিণত হয়ে খুব তাড়াতাড়ি হিউমাস রূপে মাটিতে মিশে যায় । | এগুলির জটিল অবস্তার কোনো পরিবর্তন হয় না । দীর্ঘদিন মাটিতে অপরিবর্তিত অবস্থয় পড়ে থাকে । |
- ইলেকট্রনিক বর্জ্য – বর্তমানে শিল্পোন্নত দেশে ও শহর গুলিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক দ্রব্যাদি, কম্পিউটার ইত্যাদি কঠিন বর্জ্য পদার্থ ক্রমশ পুঞ্জীভুত হছে । এগুলি ‘e-waste’ বা ইলেকট্রনিক বর্জ্য নামে পরিচিত । ভারতের মুম্বাই, বেঙ্গালুরু শহরে এজাতীয় বর্জ্যের পরিমাণ খুব বেশি ।
- বর্জ্য দূষণের বিভিন্ন রোগ – সিসা দূষণে – ডিসলেক্সিয়া, পারদ দূষণে – মিনামাটা, ক্যাডমিয়াম দূষণে – ইটাই-ইটাই, ফ্লুওরাইড দূষণে – ফ্লোরোসিস, আর্সেনিক দূষণে – ব্ল্যাকফুট।
- সিউয়েজ – শহরের নালা নর্দমা ও সেপটিক ট্যাঙ্কে কাদার মতো নোংরা তরল পদার্থকে সিউয়েজ বলে ।
- স্লাজ – নর্দমার নীচে বা সিউয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে জল ধারার তল দেশে যে ভারী ও কঠিন উপাদান থিতিয়ে পড়ে, তাকে স্লাজ বলে ।
- বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার যন্ত্র – ইনসিনেরেট।
- পাইরোলিসিস – কঠিন বর্জ্যের অক্সিজেনহীন দহন ।
- সবুজ পাত্র – জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য ।
- হলুদ পাত্র – জৈব অবিশ্লেষ্য বর্জ্য ।
- ওশান ডাম্পিং – সমুদ্রে কঠিন বর্জ্য নিক্ষেপ ।
- লেজিও নিয়ারস – নরওয়েতে স্ক্রাবার থেকে সৃষ্টি রোগ ।
- কোলিফর্ম – নদীর জলে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ।
- জাতীয় স্বচ্ছতা দিবস – 2রা অক্টোবর ।
- স্বচ্ছ ভারত অভিযান – 2রা অক্টোবর, 2014 নতুন দিল্লি ।
- Green City পরিকল্পনা – কলকাতা ।
- বিপজ্জ্বনক বর্জ্য বিধি – 1949 খ্রিঃ।
- ইউট্রিফিকেশন – কৃষি জমির রাসায়নিক সার জলাশয়ে যুক্ত হলে শৈবালের পোষক খাদ্যের জোগান বৃদ্ধি পায় । জলে শৈবালের সাম্রাজ্য তৈরিতে জল ব্যবহার অযোগ্য হয় । একে উট্রিফিকেশন বলে ।
- র্যাগপিকার – যে সব গরীব লোকেরা আস্তাকুঁড় বা ভ্যাট থেকে পুর্নব্যবহার যোগ্য বর্জ্য সংগ্রহ করে, তাদের র্যাগপিকার বলে ।
- ফার্মেন্টেশন – অবায়ুজীবি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে জৈব পদার্থ পচানোর প্রক্রিয়াকে ফার্মেন্টেশন বলে ।
- বর্জ্য পদার্থের উৎসগুলি আলোচনা কর ।
উঃ – পরিবেশের বর্জ্য পদার্থের উৎস নানা ধরেনের, যথা –
i) গৃহস্থালীর বর্জ্য :- রোজকার ঘরোয়া কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অব্যবহার্য পদার্থ, যেমন – আনাজের ও ডিমের খোসা, পুরোনো জামাকাপড়, কাগজপত্র, খবরের কাগজ, খেলনার ভাঙা অংশ, কাঁচের বা প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের ভাঙা বালতি, ভাঙা আসবাবপত্র প্রভৃতি ।
ii) শিল্প বর্জ্য :- শিল্পাঞ্চল তথা নগরাঞ্চলগুলিতে গড়ে ওঠা বড়ো বড়ো কলকারখানা থেকে নির্গত নানান গ্যাসীয় বর্জ্য পদার্থ, যেমন – বিষাক্ত ধোঁয়া, CO2, CFC, বিষাক্ত কণা প্রভৃতি । এছাড়াও বেশ কিছু ধাতব পদার্থ যা মাটির সঙ্গে মেশে না ।
iii) কৃষিজ বর্জ্য :- চাষ বাসের সময় যে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক জমিতে বা শস্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে । সেগুলির অবশিষ্টাংশ সাধারণত মাটিতে মিশে বৃষ্টির জলের সঙ্গে বা জলসেচের সঙ্গে ধুয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো জলাশয়ে, পুকুর বা নদীতে গিয়ে মেশে ।
iv) পৌরসভার বর্জ্য :- এই ধরনের বর্জ্য পদার্থের মধ্যে গৃহস্থলী, শিল্পজাত কারখানার বর্জ্য পদার্থ থেকে শুরু করে হাসপাতাল ও চিকিৎসা সংক্রান্ত নানান বর্জ্য পদার্থের উপস্থিতি বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য ।
v) জৈব বর্জ্য :- জৈব বর্জ্যগুলির উৎস প্রধানত বিভিন্ন উদ্ভিদ বা প্রানীর দেহাবশেষ । এছাড়াও গৃহস্থলীর নানান অবশিষ্টাংশ এবং চর্ম শিল্পাঞ্চলেও প্রচুর জৈব বর্জ্য পাওয়া যায় ।
vi) চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য :- কোনো হাসপাতাল বা নার্সিংহোম সংক্রান্ত জায়গায় থাকা চিকিৎসা সংক্রান্ত নানান বর্জ্য, যেমন – তুলো, গজ কাপড়, ব্যান্ডেজ, শল্যচিকিৎসার নানান ধাতব অংশ বিশেষ, রোগীর জামা কাপড় ও ব্যবহৃত নোংরা কাপড়, ঔষুধের প্যাকেট, সিরিঞ্জ প্রভৃতি।
- পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের প্রভাব আলোচনা কর ।
উঃ – i) বায়ু দূষণ :- বর্জ্য পদার্থগুলিকে পরিবেশের বিভিন্ন স্থানে জমিয়ে রাখার ফলে তা থেকে পচা দুর্গন্ধ নির্গত হয় । তা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তথা সমগ্র বায়ুমন্ডলে বায়ু দূষণ ঘটায় ।
ii) জল ও মৃত্তিকা দূষণ :- কৃষি জমিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার অথবা কীটনাশক তথা পয়ঃপ্রণালী নির্গত তরল বর্জ্যগুলি, বৃষ্টি বা জল সেচের দ্বারা ধুয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো নদীতে মিশে সেখানকার স্বাভাবিক জলজ বাস্তুতন্ত্রকে ব্যহত করে । এছাড়া মাটির উর্বর শক্তির পক্ষেও ক্ষতি কারক ।
iii) বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যহীনতা :- এই বর্জ্য পদার্থের সঞ্চয় এবং তার পরিমাণ পরিবেশে বেড়েই চলেছে । ফলে পুকুর, বনভূমি তৃণভূমি প্রভৃতি স্থানে বাস্তুতন্ত্রগুলি দিনের পর দিন ভারসাম্য হারাছে ।
iv) জীববৈচিত্র হ্রাস :- পৃথিবীর বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রগুলি উক্ত নানা পরিবেশের দূষণের ফলে তাদের ভারসাম্য হারাচ্ছে, ফলে পরিবেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবগুলি লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশে জীববৈচিত্র হ্রাস পাচ্ছে ।
- ভার্মিং কম্পোস্টিং :- কেঁচোর বিভিন্ন প্রজাতির সাহায্যে বিভিন্ন জৈব আবর্জনা, সব্জির খোসা ইত্যাদিকে পচিয়ে মিশ্র সার তৈরির পদ্ধতিকে ভার্মি কম্পোস্টিং বলে । এটি জৈব সার । এর ব্যবহারে মাটি ও জলের দূষণ হয় না ।
- 3R নীতি :- বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস, পুনর্ব্যবহার ও পুনর্বীকরণকে একত্রে 3R নীতি বলে । 3R -এর অর্থ হল Reduce, Reuse, Recycle.
- 4R নীতি :- বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য বা অব্যবহার্য পদার্থসমূহ কে নতুন ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যে পরিবর্তন করে পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখার প্রক্রিয়াকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে । প্রধানত 4টি প্রক্রিয়ায় (4R) মাধ্যমে বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা হয় ।
যেমন – i) Reduce বা অপচয় হ্রাস করণ, ii) Reuse বা পুনর্ব্যবহার, iii) Recycle বা পুনর্বীকরণ, iv) Refuse বা প্রত্যাখান করা ।
- 1989 – বিপজ্জ্বনক বর্জ্য আইন ।
- 1998 – বায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য ।
- 2000 – কঠিন বর্জ্য পরিচালনা আইন ।
- স্ক্রাবার :- স্ক্রাবার নামক যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন কলকারখানায় দূষিত ধোঁয়া ও দূষিত ভাসমান কণা বা গ্যাসীয় বর্জ্যকে বিশুদ্ধ করে বায়ুতে ছড়ানোর পদ্ধতিকে স্ক্রাবার বলে ।