বারিমণ্ডল
- সমুদ্রস্রোত –
Ans. সমুদ্রে জলরাশি নিয়মিতভাবে ও নির্দিষ্ট দিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয় । সমুদ্র জলের এই গতি বা প্রবাহকে সমুদ্রস্রোত বলে ।
- ফেচ –
Ans. বাধাহীন উন্মুক্ত সুমুদ্রের ঢেউকে ফেচ বলে ।
- আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম হল –
Ans. ল্যব্রাডর স্রোত ।
- প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম হল–
Ans. কুরেশিয়ো স্রোত ।
- প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোতের নাম হল –
Ans. বেরিং স্রোত ।
- ভূপৃষ্টের মোট যে পরিমান অংশ বারিমণ্ডলের অন্তর্গত তা হল –
Ans. প্রায় 71.4% ।
- সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ হল –
Ans. নিয়ত বায়ুপ্রবাহ ।
- ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত প্রবাহিত হয় –
Ans. প্রশান্ত মহাসাগরে ।
- ষাঁড়াষাঁড়ির বান দেখা যায় –
Ans. হুগলি নদীতে ।
- উত্তর ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোত –
Ans. মৌসুমি বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ।
- আটলান্টিক মহাসাগরের শৈবাল সাগর –
Ans. ক্যানারি স্রোতের কারণে সৃষ্ট।
- নিউ ফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের দঃ – পূর্বে –
Ans. গ্রান্ড ব্যাঙ্ক মগ্ন চড়া অবস্থিত ।
- শৈবাল সাগর দেখা যায় –
Ans. আটলান্টিক মহাসাগরে ।
- এল নিনো দেখা যায় –
Ans. প্রশান্ত মহাসাগরে ।
- প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত –
Ans. উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত –
উষ্ণ স্রোত – কুরেশিয়ো স্রোত, সুসীমা স্রোত, উঃ প্রশান্ত মহাসাগরীয় ড্রিফট ।
শীতল স্রোত – ক্যালিফোর্নিয়া অলিওসিয়ান, বেরিং, কাম চাটকা ।
মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত –
উষ্ণস্রোত – উঃ নিরক্ষীয়, দঃ নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত ।
দঃ প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত –
শীতল স্রোত – পশ্চিমা, পেরু বা হামবোল্ট ।
উষ্ণস্রোত – এল নিনো, পূর্ব অস্ট্রেলিয় ।
- আটলান্টিক মহাসাগরীয় স্রোত –
Ans. উঃ আটলান্টিক মহাসাগরীয় স্রোত –
উষ্ণ স্রোত – ফ্লোরিডা, উপসাগরীয় (দ্রুততম), উঃ আটলান্টিক ড্রিফট, নরওয়ে, হার্মিংগার ;
শীতল স্রোত – ক্যানারি, ল্যাব্রাডর, পূর্ব গ্রিনল্যান্ড ।
মধ্য আটলান্টিক মহাসাগরীয় স্রোত –
উষ্ণ স্রোত – উঃ নিরক্ষীয় স্রোত, দঃ নিরক্ষীয় স্রোত, নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত ।
দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরীয় স্রোত –
উষ্ণ স্রোত – ব্রাজিল স্রোত ;
শীতল স্রোত – ফকল্যান্ড, পশ্চিম বেঙ্গুয়েলা ।
- ভারত মহাসাগরীয় স্রোত –
Ans. উঃ ভারত মহাসাগরীয় স্রোত –
উষ্ণ স্রোত – মৌসুমি, সোমালি, উঃ নিরক্ষীয় ।
দ ভারত মহাসাগরীয় স্রোত –
উষ্ণ স্রোত – দক্ষিণ নিরক্ষীয়, নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত, মাদাস্কার, মোজানিক, আগুল হাস, পশ্চিম অস্ট্রেলীয়, শীতল পশ্চিম স্রোত ।
- হিম শৈল –
Ans. বিশালাকৃতি বরফের স্তুপ যখন সমুদ্রের জলে ভাসতে থাকে তখন তাকে হিমশৈল বলে ।
- হিম প্রাচীর –
Ans. আটলান্টিক মহাসাগরে দেখা যায় । উষ্ণ-শীতল স্রোতের সীমারেখা ।
- মগ্নচড়া –
Ans. গভীর প্লাংকটন পূর্ণ ঢালু জমি ।
- কুণ্ডলী বা গায়র –
Ans. প্রশান্ত, আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের উপক্রান্তীয় অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল স্রোতগুলি পৃথিবীর আবর্তন সৃষ্ট কোরিওলিস বলের প্রভাবে বেঁকে ও পরস্পর মিলিত হয়ে যে চক্রাকার জলাবর্ত সৃর্ষ্টি হয়, তাকে কুণ্ডলী বা গায়র বলে । এই তিনটি মহাসাগরে মোট পাঁচটি গায়র আছে । যথা – শৈবাল সাগর ।
- শৈবাল সাগর –
Ans. উঃ আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে ভাগে উপসাগরীয়, উঃ আটলান্টিক, ক্যানারি ও উঃ নিরক্ষীয় স্রোতের ঘড়ির কাঁটার দিকে চক্রাকারে আবর্তনের ফলে যে স্রোত শুন্য ও সারগাসাম শৈবাল সমৃদ্ধ উপবৃত্তাকার জলাবর্ত বা সাগর সৃষ্টি হয়েছে, তাকে শৈবাল সাগর বলে । এখানে শৈবাল ছাড়া প্ল্যাংটন, মাছ কিছুই জন্মায় না । তাই একে জীবহীন মুরুভূমি বলা হয় । এটি পৃথিবীর এমন এক সাগর যার কোনো উপকূল নেই ।
- সমুদ্রতরঙ্গ ও সমুদ্রস্রোতের মধ্যে পার্থক্য লেখ ।
Ans.
বিষয় | সমুদ্রতরঙ্গ | সমুদ্রস্রোত |
i) প্রকৃতি | উলম্ব আলোড়ন | অনুভূমিক প্রবাহ |
ii) স্থান পরিবর্তন | স্থান পরিবর্তন না করে এক জায়গায় আবদ্ধ হয়েই ওঠানামা করে, তাই এটি স্থানিক । | নির্দিষ্ট দিকে সর্বদাই স্থান পরিবর্তন করে । এটি অগ্রগতি সম্পন্ন । |
iii) উৎপত্তির শক্তি | বায়ু শক্তি হল প্রধান । | বায়ু, কোরিওলিস বল, জলের ও লবন ও তারতম্য প্রভৃতি । |
iv) প্রবাহের অঞ্চল | সমুদ্রের পৃষ্ঠদেশে । | সমুদ্রের পৃষ্ঠ ও গভীর সমুদ্র – উভয় অঞ্চল । |
v) উপকূলের সঙ্গে সম্পর্ক | উপকূলের প্রায় সমকোন আঘাত করে। | প্রায় সমান্তরাল ভাবে প্রবাহিত হয় । |
vi) কাজ | সমুদ্রতরঙ্গ সামুদ্রিক ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্য করে উপকূলের ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায় । | সমুদ্রস্রোত উপকূল ভাগের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রন করে । |
- সমুদ্রস্রোতকে কয় ভাগে ভাগ করা হয় ও কী কী ? এদের মধ্যে পার্থক্য লেখ ।
Ans. সমুদ্রস্রোতকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা – (a) উষ্ণস্রোত (b) শীতল স্রোত
বিষয় | উষ্ণস্রোত | শীতল স্রোত |
i) সংজ্ঞা | উষ্ণ সমুদ্রের গরম ও হালকা জলরাশি সমুদ্রের উপরিভাগ দিয়ে পৃষ্ঠ প্রবাহ রূপে মেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়, একে উষ্ণ স্রোত বলে । | শীতল সমুদ্রের ঠান্ডা ও ভারী জলরাশি অন্তঃপ্রাবাহ রূপে উষ্ণ মন্ডলের দিকে প্রবাহিত হয়, একে শীতল স্রোত বলে । |
ii) উৎপত্তি | নিরক্ষীয় অঞ্চল বরাবর উৎপত্তি লাভ করে । | উত্তর মেরু অথবা দঃ মেরু অঞ্চল বরাবর উৎপত্তি লাভ করে । |
iii) উপকূলের প্রভাব | উপকূল অঞ্চলের আবহাওয়া উষ্ণ হয় । | উপকূল অঞ্চলে আবহাওয়া শীতল হয় । |
iv) প্রবাহ | নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরুর দিকে প্রবাহিত হয় । | মেরু অঞ্চল থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় । |
v) মৎস ক্ষেত্র | উষ্ণ সমুদ্রে গড়ে উঠে না । | শীতল সমুদ্রে গড়ে ওঠে । |
vi) হিম শৈল | উষ্ণ সমুদ্রে থাকে না । | শীতল সমুদ্রে থাকে । |
vii) উষ্ণতা ও লবণতা | খুব বেশি । | কম । |
viii) বর্ণ | গাঢ় নীল বর্ণের হয় । | গাঢ় সবুজ বর্ণের হয় । |
ix) উদাহরণ | উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত । | শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত । |
- মগ্নচড়া –
Ans. উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে হিমশৈলের গলনের ফলে নুড়ি, কাঁকর, পলি, বালি সঞ্চিত হয়ে যে নিম্ন ভূমিভাগ গড়ে উঠে, তাকে মগ্নচড়া বলে ।
যেমন – গ্রান্ড ব্যাঙ্ক (পৃথিবীর বৃহত্তম), জরজেস ব্যাঙ্ক, ডগার্স ব্যাঙ্ক, স্যান্ট ব্যাঙ্ক ।
- ফেরেলের সূত্রটি লেখ ।
Ans. বিজ্ঞানী ফেরেল ঊনবিংশ শতকের পঞ্চাশের দশকে বায়ু ও সমুদ্রস্রোতের গতিবিক্ষেপ জনিত একটি সূত্র উদ্ভাবন করেন । সেটি হল পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে উত্তর গোলার্ধের কোনো গতিশীল কণা তার প্রকৃত গতিপথের ডানদিকে বেঁকে যায় এবং দঃ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়, একেই ফেরেলের সূত্র বলে ।
কারণ – উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে যাওয়ার সময় কোরিওলিস বলের তারতম্যেই এই গতি বিক্ষেপণ ঘটে ।
- কোরিওলিস বল কাকে বলে ।
Ans. 1835 খ্রিঃ প্রথম জি. ডি. কোরিওলিস কোরিওলিস বল সম্পর্কে বলেন ।
পৃথিবীর আবর্তন গতির কারণে পৃথিবীর ওপর যে বল সৃষ্টি হয়, তাকে কোরিওলিস বল বলে ।
কারণ – কোরিওলিস বলেন পৃথিবীর আবর্তন গতির কারণে যে বল সৃষ্টি হয় তার প্রভাবে বায়ু, সমুদ্র স্রোত প্রভৃতি সোজা পথে প্রবাহিত না হয়ে উঃ গোলার্ধে কিছুটা ডানদিকে এবং দঃ গোলার্ধে কিছুটা বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় ।
- সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণগুলি আলোচনা কর ।
Ans. সামুদ্রস্রোত সৃষ্টি, প্রবাহ ও গতিপ্রকৃতি নানা কারণে নিয়ন্ত্রিত হয় । সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণগুলি হল –
(i) বায়ুপ্রবাহ – আধুনিক বৈজ্ঞানিকদের মতে, বায়ুপ্রবাহই হল সমুদ্রস্রোতের প্রধান কারণ । নিয়ত বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের গতি লক্ষ করলে দেখা যায় যে, প্রবল নিয়ত বায়ুপ্রবাহ নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত হওয়ার সময় সমুদ্রস্র্রোতকেও নিজের প্রবাহপথের দিকে টেনে নিয়ে যায় ।
(ii) সমুদ্রজলের উষ্ণতা ও লবণত্ব –
(a) সূর্যরশ্মি ভুপৃষ্টের সর্বত্র সমান ভাবে পড়ে না । নিরক্ষীয় অঞ্চলে লম্বভাবে পড়া প্রবল সূর্যকিরণে সমুদ্রের জল অধিক উষ্ণ, প্রসারিত ও হালকা হয়ে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে বহিঃস্রোত রূপে শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে এবং মেরু অঞ্চলের তীর্যক সূর্য কিরণে সমুদ্রের জল শীতল, ঘন ও ভারী হয়ে অন্তঃস্রোত রূপে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয় ।
(b) সমুদ্রে অধিক লবনাক্ত জলের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় তা কম লবনাক্ত জলের দিকে অন্তঃস্রোত রূপে এবং কম লবনাক্ত জল হালকা হওয়ায় বহিঃস্রোত রূপে বেশি লবনাক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয় ।
(iii) সমুদ্রজলের ঘনত্ব – সমুদ্রজলের ঘনত্ব তার লবনত্বের ওপর নির্ভর করে । ফলে কোথাও সমুদ্রজলের ঘনত্ব বেশি, কোথাও কম । ঘনত্বের পার্থক্যের জন্যই নিরক্ষীয় অঞ্চলের আমাজন নদীর সুপেয় জল তটরেখা থেকে 300 km পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগরের লবনাক্ত জলরাশির ওপর ভেসে থাকে ।
(iv) বরফের গলন – দুই মেরু সংলগ্ন সমুদ্রজলে বিপুল পরিমানে বরফে গলে মেশার ফলে সমুদ্রে মিষ্টি জলের পরিমান বৃদ্ধি পায় এবং লবনত্ব হ্রাস পায় ।
(v) উপকূলের আকৃতি – সমুদ্র স্রোতের প্রবাহপথে মহাদেশীয় উপকূল ভাগ বা দ্বীপসমূহের অবস্থানের ফলে সমুদ্রেস্রোতের দিকে পরিবর্তীত হয় ।
- উপকূলের জলবায়ু বা জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা ।
Ans. সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে উপকূল তথা পৃথিবীর জলবায়ুতে নানান পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, যথা –
(i) উষ্ণতার ওপর প্রভাব – শীতল সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে যেমন উষ্ণ মন্ডলের দেশগুলির সমুদ্র উপকূলীয় জলবায়ু কিছুটা শীতল তেমনি উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে উচ্চ অক্ষাংশের দেশগুলির জলবায়ু কিছুটা উষ্ণ হয় ।
(ii) বৃষ্টিপাতের বন্টনের প্রভাব – উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে এসে বায়ু জলীয় বাস্পপূর্ণ হয়ে স্থলভাগে বৃষ্টিপাত ঘটায় ।
(iii) তুষারপাত সৃষ্টি – শীতল সমুদ্রস্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু অনেক সময় তুষারপাত হয় ।
(iv) মরুভূমি সৃষ্টি – শীতলস্রোত প্রবাহিত মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে অনাবৃষ্টির জন্য কালাহারি, সোনেরান, আটাকামা মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে ।
(v) জলবায়ুর পরিবর্তন – সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে কোথাও কোথাও স্থানীয়ভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন লক্ষ করা যায় ।
- জোয়ার ভাটা –
Ans. চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণে একই জায়গায় সাগর, মহাসাগর ও নদনদীর জলরাশির একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিয়মিতভাবে ছন্দময় উত্থান বা ফুল ওঠাকে জোয়ার এবং সমকোণে অবস্থিত স্থানগুলিতে জলরাশির পতন বা নিচু হওয়াকে ভাটা বলে । একই স্থানে প্রতিদিন দুবার করে জোয়ার ভাটা হয় ।
- জোয়ারভাটার প্রধান কারণ –
Ans. (i) চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির প্রভাব ।
(ii) পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিক বল ।
- জোয়ারের প্রকারভেদ –
Ans. জোয়ারকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় । যথা –
(i) মুখ্য জোয়ার – পৃথিবীর আবর্তনের ফলে সমুদ্র-জলের যে অংশ চাঁদের সম্মুখীন হয়, সেখানে চন্দ্রের আকর্ষণ বেশি কার্যকর হয় । এর ফলে যে জলস্ফীতি হয়, তাকে মুখ্য জোয়ার বলে ।
(ii) গৌণ জোয়ার – চাঁদের আকর্ষণের বিপরীত দিকে প্রধানত কম শক্তিশালী যে জোয়ারের সৃর্ষ্টি হয়, তাকে গৌণ জোয়ার বলে ।
- অমাবস্যা তিথি –
Ans. এই তিথিতে সূর্য ও পৃথিবীর কেন্দ্রের সঙ্গে চাঁদের যে কেন্দ্র মধ্যবর্তী অবস্থান থাকে, একে সংযোগ অবস্থা বলে ।
- পূর্ণিমা তিথি –
Ans. এই তিথিতে চাঁদের কেন্দ্র সূর্য ও পৃথিবীর পরে থাকে । তিনটি কেন্দ্রেই একই সরল রেখায় অবস্থান করে, এই অবস্থানকে প্রতিযোগ অবস্থান বলে ।
চিত্র :- অমবস্যা ও পূর্ণিমা তিথি এবং ভরা ও মরা কোটাল ।
- তেজ বা ভরা কোটাল –
Ans. অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করলে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে সূর্যের আকর্ষণ বলের মিলিত শক্তির প্রভাবে সমুদ্রে পৃষ্ঠে সবথেকে প্রবল জোয়ার হয়, একে ভরা কোটাল বা তেজ জোয়ার বলে ।
- মরা কোটাল –
Ans. কৃষ্ণ ও শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্যের পরস্পর বিরোধী দুর্বল আকর্ষণে সমুদ্রপৃষ্ঠে সবচেয়ে দুর্বল জোয়ার হয়, একে মরা কোটাল বলে । কোটাল শব্দের উৎপত্তি তামিল শব্দ কজল থেকে । যার অর্থ সমূদ্র ।
- সিজিগি –
Ans. চাঁদের কেন্দ্র পৃথিবীর ও সূর্যের কেন্দ্রের সঙ্গে একই একই সরলরেখায় অবস্থান করলে জ্যোতিশাস্ত্রনুসারে তাকে সিজিগি বলে । একে 2 ভাগে ভাগ করা হয় । যথা – (i) সংযোগ অবস্থা, (ii) প্রতিযোগ অবস্থা ।
- অ্যাপোজি –
Ans. পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরতম অবস্থাকে অ্যাপোজি বলে । এই সময় চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব সর্বাধিক 407000 কিমি. ।
- পেরিজি –
Ans. চন্দ্রের পৃথিবী পরিক্রমার সময় চন্দ্র ও পৃথিবীর নিকটতম অবস্থাকে পেরিজি বলে । এই সময় চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব হয় 356000 কিমি. ।
- মুখ্য ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে পার্থক্য লেখ ।
Ans.
বিষয় | মুখ্য জোয়ার | গৌণ জোয়ার |
i) সংজ্ঞা | পৃথিবীর আবর্তনের ফলে সমুদ্র-জলের যে অংশ চাঁদের সম্মুখীন হয়, সেখানে চন্দ্রের আকর্ষণ বেশি কার্যকর হয় । এর ফলে যে জলস্ফীতি হয়, তাকে মুখ্য জোয়ার বলে । | চাঁদের আকর্ষণের বিপরীত দিকে প্রধানত কম শক্তিশালী যে জোয়ারের সৃর্ষ্টি হয়, তাকে গৌণ জোয়ার বলে । |
ii) প্রাবল্য | মুখ্য জোয়ারের প্রাবল্য গৌণ জোয়ারের চেয়ে অনেক বেশি । | গৌণ জোয়ারের প্রাবল্য মুখ্য জোয়ারের চেয়ে অনেক কম । |
iii) কারণ | চাঁদের আকর্ষণ শক্তির টানে মুখ্য জোয়ার হয়ে থকে । | পৃথিবীর আবর্তন সৃষ্ট বিকর্ষণ বল দ্বারা গৌণ জোয়ার হয় । |
iv) অবস্থান | এই সময় পৃথিবীর জোয়ার স্থলটি চাঁদের সামনে থকে । | এই সময় জোয়ার স্থলটি চাঁদের প্রতিপাদ স্থানে থাকে । |
v) ভিন্ননাম | এই জোয়ার চাঁদের মহাকর্ষ শক্তির ফলে সরাসরি হয় বলে একে প্রত্যক্ষ জোয়ার বলে । | এই জোয়ার পৃথিবীর কেন্দ্রাতিক বলের ফলে হয় বলে একে পরোক্ষ জোয়ার বলে । |
- সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা মধ্যে পার্থক্য লেখ ।
Ans.
পার্থক্যের ভিত্তি | জোয়ারভাটা |
সমুদ্রস্রোত |
i) বিষয় | চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে সমুদ্র-জলের নির্দিষ্ট সময়ান্তরে উত্থান হল জোয়ার এবং পতন হল ভাটা । | পৃথিবীর আবর্তনে ও কোরিওলিস বল, বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্র-জলের উষ্ণতা ও লবনের তারতম্য প্রভৃতি কারণে সমুদ্র-জলের একমুখী প্রবাহ হল সমুদ্রস্রোত । |
ii) সময় | নির্দিষ্ট সময়ান্তরে ঘটে । | প্রায় সবসময়ই একইদিকে প্রবাহিত হয় । |
iii) অঞ্চল | সমুদ্রের সব জায়গায় এর প্রভাব পড়ে । | সমুদ্রের নির্দিষ্ট অংশে -এর প্রভাব পড়ে । |
iv) প্রবাহ | জোয়ারের প্রভাবে জাহাজে চলাচলে সুবিধা হয় এবং নদীর নাব্যতা বজায় থকে । | সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে উপকূলের জলবায়ুতে প্রভাব পড়ে, মগ্নচড়া সৃষ্টি হয় এবং মৎস্য শিকারে সুবিধা হয় । |
- জোয়ার-ভাটার ফলাফলগুলি আলোচনা কর ।
Ans. জোয়ার-ভাটার নিম্নলিখিত ফলাফলগুলি রয়েছে । যেমন –
জোয়ার-ভাটার সুফল –
i) জোয়ারের ফলে নদীতে জলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং নৌচলাচলে সুবিধা হয় ।
ii) ভাটার টানে নদী আবর্জনা ও পলিমুক্ত হয় ।
iii) জোয়ারের জল নদীখাতে ঢুকে এর বিস্তার ও গভীরতা বৃদ্ধি করে, ফলে নদীবন্দরে জাহাজে চলাচলে সুবিধা হয় ।
iv) জোয়ারের জলে পুষ্ট খাঁড়িতে বহুরকম জলজ উদ্ভিদ, অন্যান্য জলজ প্রাণী, উভচর প্রাণী এবং মাছ দেখা যায় ।
v) আজকাল উন্নত দেশগুলিতে জোয়ারের জলকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ।
জোয়ার-ভাটার কুফল –
(i) জোয়ারের জল অনেক সময় নদী – মোহনার পলি তুলে নিয়ে দেশের অভ্যান্তরে নদী গর্ভে জমা করে নদীর গভীরতা জমা করে নদীর গভীরতা কমিয়ে ফেলে ।
(ii) জোয়ারের জলে নদীর মিষ্টি জল লবনাক্ত হয়ে যাওয়ার তা খাওয়ার ও সেচের কাজে অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে ।
(iii) প্রবল জোয়ারের ফলে নদীতে যে জলস্ফীতি ঘটে তার ফলে অনেক সময় নদীতীরের চাষাবাদ ও বাড়ি ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয় ।
(iv) প্রবল জোয়ারের ফলে নদীতে বান আসলে, তার ফলে নৌকাডুবি এবং জীবনহানির সম্ভাবনা থাকে ।
- জোয়ারভাটার সৃষ্টির কারণগুলি লেখ । চিত্রসহ।
Ans. দুটি প্রধান কারণে জোয়ার ভাটা হয়। যথা :
(i) পৃথিবীর আবর্তন –
পৃথিবীর তার মেরুদন্ড বা নিজের অক্ষের চারিদিকে নির্দিষ্ট গতিতে অবিরাম ঘুরে চলেছে । পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে কেন্দ্র বিমুখ বা বহির্মুখী শক্তির উৎপন্ন হয় । এই বহির্মুখী শক্তির প্রভাবে সমুদ্রের জল বাইরের দিকে বেরিয়ে যাতে চায় । চাঁদের আকর্ষণে সমুদ্রের যেখানে জোয়ার হয়, ঠিক তার বিপরীত দিকে চাঁদের আকর্ষণে তুলনায় কেন্দ্রবিমুখ বলের প্র্রভাব বেশি হয় । ফলে সমুদ্রের ওই স্থানেও জোয়ারে হয় ।
সমুদ্রের পরস্পর বিপরীত যে দুটি স্থানে জোয়ার হয়, তার সমকোণে অবস্থিত দুটি স্থানে তখন ভাটা হয় ।
(ii) পৃথিবীর ওপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ –
সূর্যের ভর চাঁদের তুলনায় প্রায় 2 কোটি 60 লক্ষ গুন বেশি । কিন্তু চাঁদের তুলনায় সূর্য প্রায় 390 গুন দূরে অবস্থিত । চাঁদের ভর কম হওয়ার সত্ত্বেও সূর্যের তুলনায় চাঁদ পৃথিবীর অনেক কাছে রয়েছে বলে, পৃথিবীর ওপর চাঁদের আকর্ষণ সূর্যের তুলনায় প্রায় 2 গুন বেশি । তাই প্রধান চাঁদের আকর্ষণে জোয়ার হয় ।
চিত্র :- জোয়ার ভাটা সৃষ্টি
- বাণডাকা কাকে বলে ?
অথবা, গঙ্গা নদীতে বাণডাকে কেন ?
Ans. জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল প্রবল বেগে নদীর মোহনা থেকে নদী প্রবাহের বিপরীত মুখে নদী খাতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হলে, যে জলোচ্ছাস হয়, তাকে বান বা বানডাকা বলে । বর্ষাকালে ভরা কোটালে নদীর মোহনার কাছাকাছি অংশে বান ডাকে । হুগলি নদীতে এই ধরনের বানকে ষাঁড়াষাঁড়ির বান বলে । আমাজন নদীতে একে স্থানীয় ভাষায় পোরোরেকাস (প্রবল গর্জন) বলে ।
উদাহরণ :- পশ্চিমবঙ্গের হুগলি, ইংল্যান্ডের টেমস, ব্রাজিলের আমাজন, চীনের ইয়াং সিকিয়াং নদীতে বান ডাকে ।
- বেলোর্মি –
Ans. পৃথিবীর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করায় জোয়ারের জল স্রোতের আকারের বিপরীত দিকে অর্থাৎ পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং ভাটার টান পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়, একে বোলোর্মি বলে । উন্মুক্ত সমুদ্রে এটি সুস্পষ্টভাবে দেখা যায় ।
- ভরা কোটাল ও মরা কোটালের মধ্যে পার্থক্য লেখ ।
Ans.
বিষয় | ভরা কোটাল | মরা কোটাল |
i) সংজ্ঞা | অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করলে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে সূর্যের আকর্ষণ বলের মিলিত শক্তির প্রভাবে সমুদ্রে পৃষ্ঠে সবথেকে প্রবল জোয়ার হয়, একে ভরা কোটাল বা তেজ জোয়ার বলে । | কৃষ্ণ ও শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে চাঁদ ও সূর্যের পরস্পর বিরোধী দুর্বল আকর্ষণে সমুদ্রপৃষ্ঠে সবচেয়ে দুর্বল জোয়ার হয়, একে মরা কোটাল বলে । কোটাল শব্দের উৎপত্তি তামিল শব্দ কজল থেকে । যার অর্থ সমূদ্র । |
ii) প্রাবল্য | জোয়ারের প্রাবল্য সবচেয়ে বেশি ও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে । | জোয়ারের প্রাবল্য সবচেয়ে কম ও ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না । |
iii) তিথি | অমাবস্যা ও পূর্ণিমার দিন এটি হয় । | কৃষ্ণ ও শুক্ল পক্ষের অষ্টমীর দিন এটি হয় । |
iv) অবস্থা | এসময় চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় থাকে । | পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদ ও সূর্য পরস্পর সমকোণে থাকে । |
v) আকর্ষণ | এক্ষেত্রে চাঁদ, সূর্যের আকর্ষণ বল একই দিকে কাজ করে । | এক্ষেত্রে চাঁদ সূর্যের আকর্ষণ বল পরস্পর বিরোধী । |
- প্রক্সিজিয়ান –
Ans. পেরিজি ও সিজিগি অবস্থান মিলে গিয়ে অমবস্যা ও পূর্ণিমা তিথি আসলে ভরা কোটাল প্রবলতম হয় ও জোয়ারের সীমা সর্বোচ্চ হয়, এই অবস্থানকে প্রক্সিজিয়ান বলে । প্রতি দেড় বছরে এটি ঘটে ।
- মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার করেন –
Ans. স্যার আইজাক নিউটন; 1642 – 1727 খ্রিস্টাব্দে ।