আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপন (অধ্যায় ২.৪)
Published 21-04-26
167 Views
Md. Monjujul Alam
Geography Tutor
Dist : Murshidabad

আর্দ্রতা অধঃক্ষেপন

  1. বাষ্পীভবন মাপার যন্ত্রঅ্যাটমোমিটার ও এভাপরিমিটার বা এভাপরেশন প্যান ।
  2. হিমাঙ্ক নির্দিষ্ট চাপে যে উষ্ণতায় জল ঘনীভূত হয়ে বরফে পরিনত হয় তাকে হিমাঙ্ক বলে । এর পরিমান হল 0°C ।
  3. মেঘের পরিমানকে মাপা হয় – অক্টো এককে ।
  4. 4 ‘o’ Clock Rain বলা হয় পরিচলন বৃষ্টিপাত ।
  5. সীমান্ত নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্নবাতে শীতল, শুষ্ক ও ভারী মেরু বায়ু পুঞ্জ এবং উষ্ণ, আর্দ্র ও হালকা উপক্রান্তীয় পশ্চিমা বায়ু পুঞ্জ পরস্পর মুখোমুখি হলে পরস্পরের সঙ্গে না মিশে যে অদৃশ্য ঢালু সীমানা বরাবর পরস্পর থেকে পৃথক থাকে, তাকে সীমান্ত বলে । এটি দুই ধরনের হয় – উষ্ণ সীমান্ত ও শীতল সীমান্ত ।
  6. Bumpy Cloud বলা হয় স্ট্যাটোকিউমুলাস মেঘকে ।
  7. সমবর্ষন রেখা পৃথিবীর যে সব স্থানে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান একই রকম সেই সমস্ত স্থান গুলিকে মানচিত্রে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করলে যে রেখা পাওয়া যায়, তাকে সমবর্ষন রেখা বলে ।
  1. মৌসুমি বায়ুতে NLM কথাটি কী সাপেক্ষে ব্যাবহৃত হয় ?

উঃ – মৌসুমি বায়ু ভারতবর্ষে প্রবেশের পর অভ্যন্তরের রাজ্যগুলিতে বর্ষা ঋতুর আগমন হয় । এইভাবে জলীয় বাষ্প পূর্ন বায়ু মহাদেশে যত ভিতর পর্যন্ত প্রবেশ করে, তাকে যে কাল্পনিক রেখার দ্বারা চিহ্নিত করা হয় তাকেই Normal Limit Of Monsoon বা NLM বলে ।

  1. Resort Climate Of The World – সারাবছর নাতিশীতোষ্ণ, রোদ ঝলমলে মনোরম জলবায়ুর জন্য ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলকে Resort Climate Of The World বলা হয় ।
  2. আর্দ্রতা কাকে বলে ? এর শ্রেনিবিভাগ কর ?

উঃ – আর্দ্রতা : কোনো নির্দিষ্ট স্থানে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে বায়ুতে অবস্থিত মোট জলীয় বাষ্পের পরিমানকে হিউমিডিটি বা আর্দ্রতা বলে । বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমান বেশি হলে তাকে আর্দ্র বায়ু এবং কম হলে তাকে শুষ্ক বায়ু বলে ।

শ্রেনিবিভাগ : আর্দ্রতা 3 ভাবে প্রকাশ করা হয় – চরম, বিশেষ ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা ।

ভিত্তি চরম আর্দ্রতা বিশেষ আর্দ্রতা আপেক্ষিক আর্দ্রতা
i) সংজ্ঞা নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে যে পরিমান জলীয় বাষ্প আছে তাকে চরম বা নিরপেক্ষ আর্দ্রতা বলে । নির্দিষ্ট ওজনের বায়ুতে যে পরিমান জলীয় বাষ্প আছে তাকে বিশেষ বা নির্দিষ্ট আর্দ্রতা বলে । নির্দিষ্ট উষ্ণতা, নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে প্রকৃত জলীয়বাষ্পের ভরের সঙ্গে ওই উষ্ণতায় ওই বায়ুকে পরিপৃক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় জলীয় বাষ্পের ভরের যে অনুপাত, তাকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে ।
ii) প্রকৃতি চরম আর্দ্রতা হল পরিমান । বিশেষ আর্দ্রতা হল পরিমান । আপেক্ষিক আর্দ্রতা হল অনুপাত ।
iii) প্রকাশ বা একক গ্রাম / ঘনসেমি গ্রাম / কিগ্রা শতাংশ (%)
iv) অধঃক্ষেপন অধঃক্ষেপনের পরিমান নির্ধারন করে । অধঃক্ষেপনের পরিমান নির্ধারন করে । পূর্বাভাস জানতে সাহায্য করে ।
v) পরিবর্তন সারাদিন পরিবর্তিত হতে থাকে । বিশেষ বিশেষ সময়ে পরিবর্তিত হয় । দিনের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয় ।
vi) উষ্ণতা উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায় । উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায় । উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতা হ্রাস পায় ।
  1. জলচক্র কাকে বলে ? এর উপাদানগুলি লেখ ?

উঃ – জলচক্র : বায়ুমন্ডল, শীলামন্ডল ও বারিমন্ডলের মধ্যে জলের বিরামহীন পরিক্রমন ও তার চক্রাকারে আবর্তিত হওয়ার ঘটনাকে জলচক্র বলে । জলের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থার পরিবর্তন যে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়, তা জলচক্রের অন্তর্গত ।

♦ জলচক্রের উপাদন : জলচক্রের উপাদানগুলি হল – i) পৃথিবীর সাগর ও মহাসাগর, ii) বরফাবৃত ভূভাগ, iii) ভূপৃষ্ঠস্থ জল, iv) ভৌমজল, v) উদ্ভিদ দেহে আবদ্ধ জল, vi) বায়ুর জলীয় বাষ্প ও vii) জল ।

  1. বাষ্পীভবন কাকে বলে ?

উঃ – জলের গ্যাসীয় অবস্থা হল বাষ্প । যে প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট উষ্ণতায় তরল ধীরে ধীরে বাষ্পে পরিনত হয়, তাকে বাষ্পীভবন বলে । সাগর, মহাসাগর, নদী, হ্রদ প্রভৃতি জলভাগ থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুতে জলীয় বাস্পের সৃষ্টি হয় ।

  1. সম্পৃক্ত অসম্পৃক্ত বায়ু কাকে বলে ?

উঃ – সম্পৃক্ত বায়ু : যে বায়ুতে কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ুর সর্বোচ্চ জলীয়বাষ্প থাকে, তাকে সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত বায়ু বলে । অর্থাৎ সম্পৃতাঙ্ক অর্জনকারী বায়ু হল সম্পৃক্ত বায়ু । সম্পৃক্ত বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা 100% ।

অসম্পৃক্ত বায়ু : যে বায়ুতে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় তার ধারন ক্ষমতার চেয়ে কম জলীয়বাষ্প থাকে, তাকে অসম্পৃক্ত বায়ু বলে ।

  1. সম্পৃতাঙ্ক কাকে বলে ?

উঃ – কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ুর সর্বোচ্চ জলীয়বাষ্প ধারন ক্ষমতা বা সীমাকে সম্পৃতাঙ্ক বলে ।

  1. শিশিরাঙ্ক কী ?

উঃ – যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ু সম্পৃক্ত হয় বা আর্দ্র বায়ুর জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শিশির, কুয়াশা, মেঘে পরিনত হয়, তাকে শিশিরাঙ্ক বলে । অন্যভাবে যে তাপমাত্রায় বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমান 100% হয় তাকে শিশিরাঙ্ক বলে ।

  1. ঘনীভবন কী ?

উঃ – যে প্রক্রিয়ায় বায়ুর বাষ্প শীতল হয়, শিশিরাঙ্কের উষ্ণতায় জলকনা এবং হিমাঙ্ক উষ্ণতায় বরফ কনায় পরিনত হয়, তাকে ঘনীভবন বলে । অর্থাৎ জলীয় বাষ্পের জলকনায় রুপান্তর প্রক্রিয়া হল ঘনীভবন ।

  1. ঘনীভবনের নিয়ন্ত্রকগুলি কী কী ? এর বিভিন্ন রূপগুলি লেখ ?

উঃ – ঘনীভবনের নিয়ন্ত্রক :

i) আপেক্ষিক আর্দ্রতা : ঘনীভবনের সঙ্গে আপেক্ষিক আর্দ্রতার সরল সম্পর্ক আছে । আর্দ্রতা 100% হলে বায়ু সম্পৃক্ত হয় এবং দ্রুত ঘনীভবন ঘটে ।

ii) শীতলতার মাত্রা : আর্দ্র বায়ু যত ওপরে উঠে দ্রুত শীতল হয়, তত ঘনীভবন তাড়াতাড়ি ঘটে ।

iii) ঘনীভবন কেন্দ্র : বায়ুতে ধুলো, কার্বন, লবন কনার উপস্থিতি বেশি থাকলে শিশিরাঙ্ক উষ্ণতায় দ্রুত ঘনীভবন ঘটে ।

  • ঘনীভবনের বিভিন্ন রূপ বা ফলাফল :ঘনীভবনের রূপ দুই জায়গায় লক্ষ্য করা যায় –

i) ভূপৃষ্ঠস্থ বায়ুতে :

a) শিশির : জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ভূপৃষ্ঠস্থ বস্তুর ওপর যে জলবিন্দুতে জমা হয়, তাকে শিশির বলে । শিশিরাঙ্ক উষ্ণতায় শিশির সৃষ্টি হয় ।

b) তুহিন : শিশিরাঙ্ক হিমাঙ্কের নীচে নেমে গেলে জলীয়বাষ্প ঊর্ধ্বপাতন প্রক্রিয়ায় সরাসরি বরফ কনায় পরিনত হয়ে ভূপৃষ্ঠস্থ বস্তুর ওপর জমা হয়, একে তুহিন বলে ।

c) কুয়াশা : ভূপৃষ্ঠের উপরিস্থিত বায়ুস্তরে ঘনীভবন ঘটলে অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র বায়ুতে ভেসে বেড়ায় । এই ভাসমান জলকনাগুলি বায়ুমন্ডলকে অস্বচ্ছ করে তোলে ও দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়, একেই কুয়াশা বলে ।

d) কুজ্ঝটিকা বা মিস্ট :বায়ুমন্ডলের নিম্ন স্তরে কুয়াশা অপেক্ষাও ক্ষুদ্র জলকনা রূপে বায়ুস্থিত বাষ্প গুলি ঘনীভূত হলে তাদের মিস্ট বলে । পার্বত্য উপত্যকায় ও উপকূল ভাগে শীতকালে মিস্ট সৃষ্টি হয় ।

e) ধোঁয়াশা : শিল্প নগরীতে কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, CO2, কার্বন মনোক্সাইড, SO2, নাইট্রাস অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস ও এরোসলের অধিক্য থাকলে শীতকালে সেগুলির সঙ্গে জলীয়বাষ্পের আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ধোঁয়াপূর্ন কুয়াশার সৃষ্টি হয়, একে ধোঁয়াশা বলে ।

1905 সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এইচ. এ. দেসভো ধোঁয়াশা শব্দটি প্রথম ব্যাবহার করেন ।

f) রাইন : কুয়াশার জলকনা তীক্ষ্ণ বস্তুর অগ্রভাগে সঞ্চিত ও শীতল হয়ে তুষার কনার সৃষ্টি করলে, তাকে রাইন বলে ।

ii) ঊর্ধ্ব বায়ুস্থ :

মেঘ : ঊর্ধ্ব আকাশে বায়ুতে ভাসমান অতি সূক্ষ থেকে ক্ষুদ্র জলকনা বা তুষার কনার সমষ্টিকে মেঘ বলে । এতে জলকনা বা তুষার কনার ব্যাস 0.001 থেকে 0.006 mm হয় । এই মেঘ থেকে বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, তুষারপাত ঘটে । প্রচলিত মেঘ 24 টি।

যথা :

পরিষ্কার আবহাওয়ার মেঘ : সাদা সিরাস, সিরোকিউমুলাস, অল্টোকিউমুলাস, কিউমুলাস ।

প্রবল বৃষ্টিপাতের মেঘ : স্ট্যাটোকিউমুলাস ।

একটানা বৃষ্টিপাতের মেঘ :– নিম্বোস্ট্যাটাস ।

বজ্রবিদ্যুৎ সহ প্রবল বৃষ্টিপাতের মেঘ : কিউমুলোনিম্বাস ।

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত : সিরোস্ট্যাটাস, স্ট্যাটাস ।

  1. অধঃক্ষেপন কাকে বলে ? এর বিভিন্ন রূপগুলি লেখ ?

উঃ – অধঃক্ষেপন :– মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে বায়ুমন্ডল থেকে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তরল ও কঠিন অবস্থায় ভূপৃষ্ঠের পতনকে অধঃক্ষেপন বলে ।

প্রকারভেদ :

i) তরল অধঃক্ষেপন :– বৃষ্টিপাত, গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ।

ii) কঠিন অধঃক্ষেপন : তুষারপাত, শ্লিট, শিলাবৃষ্টি ।

a) বৃষ্টিপাত :– বায়ুমন্ডল থেকে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে তরল জলকনা রুপে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের পতনকে বৃষ্টিপাত বলে ।

b) গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি :অতি সূক্ষ জলকনা খুব ঘনভাবে ও বায়ুতে ভেসে ভেসে ভূপৃষ্ঠে পড়লে তাকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি বলে ।

c) তুষারপাত : মেঘ থেকে ঘনীভূত জলকনা অতি সুক্ষ ময়দার গুঁড়োর মতো বরফ কনা রূপে ভূপৃষ্ঠে পড়লে, তাকে তুষারপাত বলে ।

d) শ্লিট : নকুল দানার মতো ছোটো বরফ গুটি ভূপৃষ্ঠে পড়লে তাকে শ্লিট বলে ।

e) শিলাবৃষ্টি :– শিলাপাতের সঙ্গে বড়ো বড়ো বরফ টুকরো শিলা আকারে ভূপৃষ্ঠে পড়লে তাকে শিলাবৃষ্টি বলে ।

  1. বৃষ্টিপাতের শ্রেনিবিভাগ করে আলোচনা কর ?

উঃ – সৃষ্টির ভিত্তি অনুযায়ী বৃষ্টিপাতকে 3 ভাগে ভাগ করা যায় যথা :

    বিষয়    পরিচলন বৃষ্টিপাত শৈলৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘূর্নবাত জনিত বৃষ্টিপাত
i) সংজ্ঞা উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু স্রোত সরাসরি ওপরে উঠে প্রসারিত ও শীতল হয়ে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ সৃষ্টি হয়ে সেখানেই প্রবল বৃষ্টিপাত হয় তাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে । জলীয় বাষ্পপুর্ন বায়ু পর্বত দ্বারা বাধা পেয়ে ওপরে উঠে ও ঘনীভুত হয়ে পর্বতের প্রতিবাদ ঢালে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়, তাকে শৈলৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে । ঘূর্নবাতের প্রভাবে ঝড়ঝঞ্জা সহ যে বৃষ্টিপাত হয় তাকে ঘূর্নবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলে ।
ii) বাষ্প স্থায়িত্ব যেখান থেকে জলীয় বাষ্প উৎপন্ন হয় সেখানেই পরিচলন বৃষ্টিপাত হয় । বাষ্পের উৎপত্তি স্থল ও শৈলৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত সংঘটন স্থলের মধ্যে দীর্ঘ দূরত্ব থাকে । দীর্ঘক্ষন ভারী বৃষ্টি হয় । উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু প্রবল বেগে ঘুরতে ঘুরতে উপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্নবাত বৃষ্টিপাত হয় । বজ্রবিদ্যুত সহ প্রবল ঝড় ও বৃষ্টি হয় ।
iii) কারন বায়ুপুঞ্জের ঊর্ধ্বগমন ও ঘনীভবন হয়ে বৃষ্টিপাত হয় । বায়ুপুঞ্জের পর্বতের প্রতিবাদ ঢালে বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত হয় । নিম্নচাপ কেন্দ্রে প্রবেশ করে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত হয় ।

i)

চিত্র – পরিচলন বৃষ্টিপাত

ii)

চিত্র – শৈলৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত

iii)

চিত্র – ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত

  1. জলবায়ু অঞ্চল কাকে বলে ? এর শ্রেণিবিভাগ করে আলোচনা কর ?

উঃ – জলবায়ু : ভূপৃষ্ঠের জলবায়ু ও আবহাওয়া উপাদান গুলির বৈশিষ্ট্যগত সাদৃশ্য ও সমধর্মীতার ভিত্তিতে কাল্পনিক রেখাযুক্ত অঞ্চলকে জলবায়ু অঞ্চল বলে ।

শ্রেণিবিভাগ : উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও উচ্চতার ভিত্তিতে পৃথিবীর উভয় গোলার্ধে পাঁচটি বৃহৎ অঞ্চলে ও 15 টি জলবায়ু অঞ্চলে চিহ্নিত করা হয় ।

i) নিরক্ষীয় বৃষ্টি জলবায়ু :

অবস্থান : 0° – 10° উঃ ও দঃ অক্ষাংশ । দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, আফ্রিকার কঙ্গোজাইরে, এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া ম্যালেশিয়া ।

বৈশিষ্ট্য :

a) উষ্ণতা : মাসিক গড় উষ্ণতা 24°C – 27°C বার্ষিক গড় উষ্ণতা 26°C, বার্ষিক উষ্ণতার প্রসার 2°C – 3°C ।

b) বায়ুচাপ : স্থায়ী ও শক্তিশালী নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে । উচ্চ উষ্ণতা, বায়ুতে প্রচুর জলীয় বাষ্পের জন্য ।

c) বায়ুপ্রবাহ : সারাবছর নিয়মিতভাবে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু ও দক্ষিণ–পূর্ব আয়ন বায়ু এখানে মিলিত হয়ে আন্তঃক্রান্তীয় মিলন অঞ্চলে (ITCZ – Inter Tropical Convergence Zone) গঠিত হয়েছে । উর্ধ্বগামী উষ্ণ বায়ুস্রোত থাকার জন্য অনুভুমিক বায়ুপ্রবাহ বোঝা যায় না । তাই এই অঞ্চল নিরক্ষীয় শান্তবলয় ।

d) মেঘাচ্ছন্নতা : প্রতিদিন আকাশে গড়ে 50-60% মেঘাবৃত থাকে ।

e) বৃষ্টিপাত : এই অঞ্চলে বর্জ্রবিদ্যুৎ ও ঝড়সহ প্রবল পরিচলন বৃষ্টিপাত হয় । গড় বার্ষিক বৃষ্টি 250 cm.

f) আর্দ্রতা : আপেক্ষিক আর্দ্রতা অনেক বেশি । গড়ে 80-90% ।

ii) মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চল :

অবস্থান : 10° – 25° উঃ ও দঃ অক্ষাংশ । এশিয়ার ভারত, মায়ানমার, বাংলাদেশ, দঃ চিন, আফ্রিকার গিনি, লাইবেরিয়া, দক্ষিন আমেরিকার গায়না, ভেনেজুয়েলা, উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো ।

বৈশিষ্ট্য :

a) ঋতু বৈচিত্র : সারাবছর ধরে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, শীত চারটি ঋতু চক্রাকারে ঘটে ।

b) উষ্ণতা : গড় বার্ষিক উষ্ণতা 24°C গ্রীষ্মকালে 27°C -32°C, শীতকালে 10°C – 27°C , বার্ষিক উষ্ণতার প্রসার 2°C – 11°C ।

c) বায়ুচাপ : ঋতু অনুসারে সম্পুর্ন বিপরীত বায়ুচাপ কক্ষ ও চাপ ঢাল সৃষ্টি হয় ।

d) বায়ুপ্রবাহ :– গ্রীষ্মকালে দঃ এশিয়াতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি এবং পূর্ব এশিয়াতে দঃ-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয় ।  শীতকালে দঃ এশিয়াতে উঃ-পূঃ মৌসুমি এবং পূর্ব এশিয়াতে উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয় ।

e) মেঘাচ্ছন্নতা : বর্ষাকালে আকাশ কালো মেঘ দ্বারা 75-100% আবৃত থাকে ।

f) বৃষ্টিপাত :– বার্ষিক বৃষ্টিপাত 90% সংঘটিত হয় । বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান 150-200 Cm.

iii) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল :

অবস্থান : 30° – 40°  উঃ ও দক্ষিণ অক্ষাংশ । ভূমধ্য সাগর সংলগ্ন ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা দেশ সমূহ । দঃ আমেরিকার মধ্য চিলি ।

বৈশিষ্ট্য :

a) ঋতু বৈচিত্র : বৃষ্টির বন্টন অনুসারে শুস্ক গ্রীষ্ম ও আর্দ্র শীত ঋতু চক্র ঘটে ।

b) উষ্ণতা : বার্ষিক গড় উষ্ণতা 27°C । গ্রীষ্মকালে 24°C – 27°C এবং শীতকালে 10°C – 15°C । গড় বার্ষিক উষ্ণতা 17°C ।

c) বায়ুচাপ : স্থায়ী কর্কট ও মকরক্রান্তি উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে ।

d) বায়ুপ্রবাহ :– গ্রীষ্মকালে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু ও শীতকালে দক্ষিণ –পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয় ।

e) মেঘাচ্ছন্নতা :– প্রায় সারাবছর রোদ ঝলমল মনোরম আবহাওয়ার জন্য একে পর্যটন বায়ু, বিনোদন জলবায়ু বলে ।

f) বৃষ্টিপাত : বার্ষিক বৃষ্টিপাত 75% সংঘটিত হয় । বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমান কম, 25 – 75 cm.

g) তুহিন তুষারপাত : শীতকালে নিম্নভূমি ও অভ্যন্তর ভাগে হালকা তুহিন পাত ও পর্বত ও উচ্চভূমিতে ব্যাপক তুষারপাত ঘটে ।

iv) উষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চল :

অবস্থান : 15° – 35° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ । আফ্রিকার সাহারা, কালাহারি, এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্য, থর, উত্তর আমেরিকার সোনেরান, দক্ষিন আমেরিকার আটাকামা, অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাংশ ।

বৈশিষ্ট্য :

a) উষ্ণতা :– বার্ষিক গড় উষ্ণতা অত্যন্ত বেশি, 28°C – 36°C, উষ্ণতার প্রসার 17°C – 22°C ।

b) বৃষ্টিপাত : খুবই কম ও অনিশ্চিত, 25 cm এর কম ।

v) তুন্দ্রা জলবায়ু :

অবস্থান : 65° – 80° উঃ ও দঃ অক্ষাংশ । এশিয়ার রাশিয়া, ইউরোপের নরওয়ের সুইডেন, উঃ আমেরিকার কানাডা ।

বৈশিষ্ট্য :

a) উষ্ণতা : শীতে 20°C থেকে 50°C । গ্রীষ্মে 5°C – 10°C ।

b) বৃষ্টিপাত :– গ্রীষ্মে বৃষ্টি ও শীতে তুষারপাত 10-40 cm.

0 0 votes
Article Rating
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments