বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন (অধ্যায় ২.২)
Published 21-04-26
176 Views
Md. Monjujul Alam
Geography Tutor
Dist : Murshidabad

বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা, ও বিশ্ব উষ্ণায়ন

  1. বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের কারনগুলি লেখ

উঃ – বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের কারনগুলি হল –

i) অক্ষাংশ :- বায়ুর উষ্ণতার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক হল অক্ষাংশগত অবস্থান । অক্ষাংশের মান বৃদ্ধির সঙ্গে উষ্ণতা হ্রাস পায় । নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরুর দিকে প্রতি 1° অক্ষাংশে 0.28°C  হারে উষ্ণতা হ্রাস পায় ।

উদাহরণ : 10° উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত ব্যাঙককের উষ্ণতা 36° উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত বেজিং এর তুলনায় 12°C বেশি হয় ।

কারন : সূর্য রশ্মির পতন কোনের পার্থক্য এবং দিন রাতের দৈর্ঘ্য ।

ii) উচ্চতা :- উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতি হাজার মিটার বা 1 কিমিতে 4°C বা প্রতি 155 মিটারে 1°C হারে উষ্ণতা হ্রাস পায় । একে স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাসের হার বা Normal Lapse Rate বলে ।

উদাহরণ : শিলিগুড়ি অপেক্ষা দার্জিলিং বেশি শীতল ।

iii) জল ও স্থলভাগের বন্টন :- জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ ও দ্রুত শীতল হয় । একই পরিমান সৌরশক্তি দ্বারা নির্দিষ্ট পরিমান জলভাগের তুলনায় ওই পরিমান স্থলভাগ 3 গুন বেশি উষ্ণ হয় ।

উদাহরণ : পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় মধ্যপ্রদেশ, পুরির তুলনায় নাগপুর চরমভাবাপন্ন ।

iv) বায়ুপ্রবাহ :- নানা ধরনের উষ্ণ ও শীতল বায়ু ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশের উষ্ণতার পরিবর্তন ঘটায় ।

উদাহরণ : উষ্ণ লু গ্রীসে উত্তর–পশ্চিম ভারতের তাপপ্রবাহ ঘটায় । এবং দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ু জুন মাসে ভারতীয় উপমহাদেশে 10°C উষ্ণতা হ্রাস করে ।

v) সমুদ্রস্রোত :- উপকূলের অদূরে উষ্ণ ও শীতল সমুদ্রস্রোত উপকূলীয় জলবায়ুকে দারুনভাবে নিয়ন্ত্রন করে ।

উদাহরণ : উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও নরওয়ের উপকূল, উত্তর সাগর শীতকালে বরফাবৃত হয় না ।

vi) ভূমিঢাল :- উত্তর গোলার্ধের পর্বতের উত্তর ঢাল অপেক্ষা দক্ষিণ ঢালে অধিক সূর্যকিরণের জন্য উষ্ণতা বেশি হয় । আল্পস পর্বতের সূর্যালোকিত পর্বত গাত্রকে ফরাসি ভাষায় এড্রিট এবং ছায়াছন্ন পর্বত গাত্রকে উবেক বলে।

vii) মেঘাচ্ছন্নতা :- আকাশে মেঘের আবরন পৃথিবীর ওপর কম্বলের মতো কাজ করে । মেঘমুক্ত অবস্থায় দিনের বেলায় সৌরশক্তির আগমন বাড়ে ও বিকিরন হার বৃদ্ধি পেয়ে উষ্ণতা বাড়ে । এবং রাতের বেলায় তাপ বিকিরন করে ঠাণ্ডা বোধ হয় । মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় দিনের বেলায় ভূপৃষ্ঠে সৌরতাপ কম পায় বলে উষ্ণতা কম হয় । এবং রাতের বেলায় মেঘের কারনে তাপ বিকিরন করে বেরোতে পারেনা ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ।

এছাড়াও

viii) অধঃক্ষেপণ, ix) স্বাভাবিক উদ্ভিদ, x) মাটি, xi) নগরায়ন, xii) শিল্পায়ন ইত্যাদি ।

  1. গরিষ্ঠ উষ্ণতা কাকে বলে ?

উঃ – একটি নির্দিষ্ট স্থানে সারাদিনের সবচেয়ে বেশি উষ্ণতাকে গরিষ্ঠ উষ্ণতা বলে । দুপুর 2 টায় ও বিকেল 5:30 মিনিটে সর্বোচ্চ পাঠ নেওয়া হয় ।

  1. লঘিষ্ট উষ্ণতা কাকে বলে ?

উঃ – একটি নির্দিষ্ট স্থানে সারাদিনের সবচেয়ে কম উষ্ণতাকে লঘিষ্ট উষ্ণতা বলে । ভোর 4 টায় ও সকাল 8:30 মিনিটে সর্বনিম্ন উষ্ণতার পাঠ নেওয়া হয় ।

  1. গড় দৈনিক উষ্ণতা : একটি নির্দিষ্ট স্থানে সারাদিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উষ্ণতাকে যোগ করে 2 দিয়ে ভাগ করলে প্রাপ্ত ভাগফলকে সেই স্থানের সেই দিনের গড় দৈনিক উষ্ণতা বলে ।

সূত্র :– গড় দৈনিক উষ্ণতা = (দিনের সর্বোচ্চ উষ্ণতা + সর্বনিম্ন উষ্ণতা) ÷ 2

  1. গড় মাসিক উষ্ণতা : একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি মাসের প্রতিদিনের গড় দৈনিক উষ্ণতাকে যোগ করে ওই মাসের দিন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে প্রাপ্ত ভাগফলকে গড় মাসিক উষ্ণতা বলে ।

সূত্র : গড় মাসিক উষ্ণতা = (1 তারিখের গড় উষ্ণতা + … + … + শেষ তারিখের গড় উষ্ণতা) ÷ মাসের মোট দিন সংখ্যা ।

  1. গড় বার্ষিক উষ্ণতা : একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি বছরের 12 টি মাসের গড় মাসিক উষ্ণতাকে যোগ করে 12 দিয়ে ভাগ করে প্রাপ্ত ভাগফলকে গড় বার্ষিক উষ্ণতা বলে । ক্রান্তীয় উষ্ণ মরু অঞ্চলে গড় বার্ষিক উষ্ণতা সর্বোচ্চ ও মেরু অঞ্চলে সর্বনিম্ন হয় ।

সূত্র : গড় বার্ষিক উষ্ণতা = (জাঃ গড় উষ্ণতা + ডিঃ গড় উষ্ণতা) ÷ 12

  1. উষ্ণতার প্রসার : একটি নির্দিষ্ট স্থানে দিন বা মাস বা বছরের সর্বোচ্চ উষ্ণতা থেকে সর্বনিম্ন উষ্ণতা বিয়োগ করে প্রাপ্ত বিয়োগফল বা উষ্ণতার পার্থক্যকে উষ্ণতার প্রসার বলে । মরু অঞ্চলে সর্বোচ্চ এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বনিম্ন হয় ।

প্রকার : এটি 3 ভাবে পরিমাপ করা হয় । যথা –

i) দৈনিক উষ্ণতার প্রসার :- একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি দিনের সর্বোচ্চ উষ্ণতা থেকে সর্বনিম্ন উষ্ণতা বিয়োগ করে প্রাপ্ত বিয়োগফল বা উষ্ণতার পার্থক্যকে দৈনিক উষ্ণতার প্রসার বলে ।

ii) মাসিক উষ্ণতার প্রসার :- একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি মাসের সর্বোচ্চ উষ্ণতা থেকে সর্বনিম্ন উষ্ণতা বিয়োগ করে প্রাপ্ত বিয়োগফল বা উষ্ণতার পার্থক্যকে মাসিক উষ্ণতার প্রসার বলে ।

iii) বার্ষিক উষ্ণতার প্রসার :- একটি নির্দিষ্ট স্থানে একটি বছরের সর্বোচ্চ উষ্ণতা থেকে সর্বনিম্ন উষ্ণতা বিয়োগ করে প্রাপ্ত বিয়োগফল বা উষ্ণতার পার্থক্যকে বার্ষিক উষ্ণতারপ্রসার বলে ।

  1. বৈপরিত্য উত্তাপ : কিছু ক্ষেত্রে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উষ্ণতা হ্রাস না পেয়ে বৃদ্ধি পায় । উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক সম্পর্কে বিপরীত অবস্থাকে বৈপরীত্য উত্তাপ বা উষ্ণতার উৎক্রম বলে ।
  2. সামুদ্রিক বায়ু : সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে আর্দ্র ও মৃদু ভাবাপন্ন জলবায়ুকে সামুদ্রিক বায়ু বলে ।

যেমন : ইউরোপের পশ্চিম উপকূলীয় সামুদ্রিক জলবায়ু ।

  1. মহাদেশীয় জলবায়ু : সমুদ্র থেকে দূরে দেশ বা মহাদেশে অভ্যন্তরীণ স্থলভাগে শুষ্ক ও চরমভাবাপন্ন জলবায়ুকে মহাদেশীয় জলবায়ু বলে ।

যেমন- মধ্য এশিয়া, যুক্ত রাষ্ট্রের মধ্য পশ্চিমাংশের জলবায়ু ।

11.সমউষ্ণ রেখা কাকে বলে ?এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ ?

উঃ – সমোষ্ণরেখা :- ভূপৃষ্টের একই বা সমান সমুদ্র পৃষ্ঠ উষ্ণতাযুক্ত স্থানগুলিকে মানচিত্রে যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, তাকে সমোষ্ণরেখা বা আইসোথার্ম (Isotherm) বলে । সুতরাং, সমোষ্ণরেখা হল সমান উষ্ণতা নির্দেশক কাল্পনিক রেখা ।

বৈশিষ্ট্য :-

i) বিস্তার – সমোষ্ণরেখাগুলি অক্ষরেখার সঙ্গে প্রায় সমান্তরালে পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত । কারণ একই অক্ষাংশে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল সমান ।

ii) বক্রতা – সমুদ্রের জলভাগে রেখাগুলি পরস্পরের সমান্তরাল । কিন্তু স্থলভাগে কিছুটা আঁকাবাঁকা হয় । উত্তর গোলার্ধে জল থেকে স্থলে বিস্তারের সময় দক্ষিণ দিকে এবং স্থল থেকে জলে উত্তরদিকে কিছুটা বক্র হয় । কারণ, স্থল ও জলের উষ্ণতার পার্থক্য ও সমুদ্রস্রোতের প্রভাব । দক্ষিণ গোলার্ধের চেয়ে উত্তর গোলার্ধে এই বক্রতা বেশি ।

iii) মান – নিন্ম অক্ষাংশ থেকে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে রেখাগুলির মান ক্রমশ হ্রাস পায় । সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল সর্বাধিক হওয়ায় নিরক্ষরেখায় এর মান সবচেয়ে বেশি এবং মেরুতে এর মান সবচেয়ে কম ।

iv) ব্যবধান – জলভাগের আধিক্যের জন্য দক্ষিণ গোলার্ধে রেখাগুলির মধ্যে ফাঁক বেশি থাকে । স্থলভাগের প্রাধান্যের জন্য উত্তর গোলার্ধে রেখাগুলি খুব ঘনভাবে অবস্থান করে ।

  1. পৃথিবীর তাপবলয়কে কয়ভাগে ভাগ করা হয় ? ব্যাখ্যা কর

উঃ –

চিত্র :- পৃথিবীর তাপবলয়

প্রকারভেদ : পৃথিবীপৃষ্ঠে পড়া সৌরতাপের তারতম্য অনুসারে পৃথিবীকে প্রধান পাঁচটি তাপমন্ডলে ভাগ করা যায়, যথা :-

i) উষ্ণমণ্ডল :- নিরক্ষরেখার উভয় পাশে অবস্থিত কর্কটক্রান্তি রেখা ও মকরক্রান্তি রেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে প্রায় সারাবছর ধরেই সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে বলে এই অঞ্চলের উষ্ণতা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি, তাই একে উষ্ণমণ্ডল বলে ।

ii) উত্তর ও দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল :- উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখা ও সুমেরু বৃত্তের মধ্যবর্তী অঞ্চলে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে মকরক্রান্তি রেখা ও কুমেরু বৃত্তের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সূর্যরশ্মি খুব একটা লম্বভাবে পড়ে না । তাই এই দুই অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল খুব একটা উষ্ণ বা শীতকাল খুব একটা শীতল হয় না । এই জন্য উত্তর গোলার্ধের এই অঞ্চলকে উত্তর নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল বলা হয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে একে দক্ষিন নাতিশীতোষ্ণমণ্ডল বলা হয়।

iii) উত্তর ও দক্ষিণ হিমমণ্ডল :- সুমেরু ও কুমেরুর চারিদিকে 66 (1/2)°  অক্ষাংশ পর্যন্ত সমস্ত জায়গায় সূর্যের পতন কোন বছরের সবসময় 43° -এর বেশি থাকে । সূর্যরশ্মি সারাবছর সবচেয়ে তির্যকভাবে পড়ে বলে এই অঞ্চলে দুটি ভয়ংকর শীতল । উত্তর গোলার্ধের সুমেরু বিন্দু এবং সুমেরু বৃত্তের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে উত্তর হিমমণ্ডল বলে । দক্ষিণ গোলার্ধের কুমেরু বিন্দু ও কুমেরু বৃত্তের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে দক্ষিণ হিমমণ্ডল বলে ।

  1. সবুজ ঘর কাকে বলে ?

উঃ – শীতপ্রধান দেশে যেখানে সারাবছর ধরে বায়ুর উষ্ণতা হিমাঙ্কের কাছাকাছি সেখানে উষ্ণমণ্ডলীয় ফুল, ফল, সবজি চাষের জন্য বাগানে স্বচ্ছ কাঁচ বা পলিথিনের দেওয়াল ও ছাউনিযুক্ত যে আবদ্ধ ও উষ্ণতার কক্ষ তৈরি করা হয়, তাকে Green House বলে ।

  1. সবুজ ঘর প্রভাব কাকে বলে ?

উঃ – বায়ুদূষণের ফলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির বিশেষত CO2 এর ঘনত্ব বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির ঘটনাকে Green House Effect বলে ।

1827 সালে বিজ্ঞানী বাপটিস্ট জোসেফ ফুরিয়ার সর্বপ্রথম Green House Effect নাম করন করেন।

  1. বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব বা ফলাফল লেখ

উঃ – বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব : ক্রমবর্ধমান হারে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি নির্গত হওয়ার ফলে বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা ক্রমশ বাড়ছে। যেমন – 1850-1990 খ্রিঃ মধ্যে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা 1°C বেড়েছে । গ্লোবাল ওয়ার্মিং -এর সম্ভাব্য প্রভাবগুলি নিচে আলোচনা করা হল –

i) মেরু অঞ্চলের বরফের গলন ও পার্বত্য হিমবাহের গলন :- বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে কুমেরু মহাদেশের গভীর পুরু বরফের স্তর এবং অন্যান্য মহাদেশীয় ও পার্বত্য হিমবাহ খুব দ্রুত গলতে থাকবে এবং বরফ গলা জল সমুদ্রে যুক্ত হয়ে সমুদ্রের জলের পরিমানকে আরও বাড়িয়ে দেবে ।

ii) সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি :- বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে মেরু ও উঁচু পার্বত্য অঞ্চলের বরফ বেশি পরিমানে গলবে এবং সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে । বিগত শতাব্দীতে 1.5°C তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় 10-12 সেমি ।

iii) অধঃক্ষেপনের প্রকৃতি পরিবর্তন :- বায়ুমণ্ডলীয় উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ুগত পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী । বৃষ্টিপাতের বন্টনে সামগ্রিক পরিবর্তন ঘটবে । উত্তর গোলার্ধের উত্তর দিকের দেশগুলিতে অতিবৃষ্টি এবং দক্ষিণ দিকের দেশগুলিতে খরার প্রকোপ বাড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে ।

iv) শস্য উৎপাদনের হ্রাসবৃদ্ধি :- তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ঋতুগুলির সময়সীমা বৃদ্ধি পাবে, ফলে কৃষি পন্যের উৎপাদন হ্রাস পাবে । এছাড়া তাপমাত্রা বাড়লে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষের হার বাড়ে । এই কারনে ভুট্টা, আম, জোয়ার, বাজরা প্রভৃতি ফসলের উৎপাদন বাড়লেও ধান, গম, ওট, বার্লি, সয়াবিন, তামাক, তুলো, পাট প্রভৃতি ফসলের উৎপাদন কমে যাবে ।

v) কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন :- বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি ক্ষেত্রের স্থান পরিবর্তন ঘটবে এবং কৃষিজমির পরিমান 10% – 50% কমে যাবে । উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেসব অঞ্চলে গম চাষ হত, উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সেসব অঞ্চলে গমের পরিবর্তে অন্য শস্যের চাষ হচ্ছে ।

  1. এল নিনো ঘটনা কাকে বলে ?

উঃ – বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রের জল উষ্ণ হয়ে উঠলে যে নিম্নচাপ তৈরি হয় তা আয়ন বায়ুপ্রবাহকে দুর্বল করে এবং এইভাবে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় । অন্যদিকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে স্বাভাবিকের থেকে বেশি শীতল আবহাওয়া সৃষ্টি হয়, একে এল নিনো ঘটনা বলে ।

  • বায়ুমন্ডলের স্তর বিন্যাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় :

 স্তরের নাম

অবস্থান বিস্তার

বৈশিষ্ট্য

 ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমণ্ডল বায়ুমণ্ডলের একেবারে নিচে ।

1000 feet – 3.6° F

8-18 km

গড়ে 12 km

i) উষ্ণতা 1000 মিটার বা 1 km তে 6.5°C হারে কমতে থাকে একে সাধারন তাপ হ্রাস (Normal Lapse Rate) বা Enviromental Lapse Rate বলে।

ii) এর উর্ধ্বে বা শেষে উচ্চতা -55°C থেকে 66°C হয় ।

iii) বায়ুমণ্ডলের 75% ভর পাওয়া যায় ।

iv) এখানে বায়ুমণ্ডলীয় সব কার্য হয়ে থাকে ।

v) ট্রপোপজ এর কাছে বায়ু স্থির থাকে বলে একে Isothermal Zone বা সমোষ্ণ অঞ্চল বলে ।

vi) এই স্তর কে ঢাকমিও বলা হয়।

 স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল  ট্রপোস্ফিয়ার এর উর্ধের স্তর 273°K/0°C 12-50 km

(15 – 35 O3গ্যাস)

 i) এই স্তরে 24-40 km এর মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব বেশি থাকায় একে ওজোনোস্ফিয়ার বলে ।

ii) মেরু অঞ্চলে নিম্ন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বরফের কেলাস দিয়ে গঠিত ‘শুক্তির জননী মেঘ’ নামে একপ্রকার মেঘ দেখা যায় ।

iii) এই অঞ্চলে গোধুলির আলো পৌছায় না বলে একে বলে ঊর্ধাকাশ ।

iv) এই স্তর -এ বায়ুর উষ্ণতা বাড়তে থাকে এবং শেষে 0°C – 4°C -এ পৌছায় ।

v) সিরাস মেঘ দেখা যায় ।

 মেসোস্ফিয়ার বা মধ্যমণ্ডল

শীতলতম স্তর

    

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার এর উপরের স্তর 50-80 km  i) এই স্তরে উষ্ণতা কমতে থাকে 80 km উচ্চতায় 90°C থেকে 100°C হয় ।

ii) উজ্জ্বল মেঘ দেখা যায় ।

iii) এখানে উল্কাপিন্ড পুড়ে ছাই হয়ে যায় ।

iv) 30-60 km তে O3 গ্যাস দেখা যায় বলে একে ওজোনোস্ফিয়ার বলে ।

v) এটি সমমণ্ডলের শেষ সীমা ।

vi) অতি বেগুনি রশ্মি শোষণ করে ।

থার্মোস্ফিয়ার বা আয়োনোস্ফিয়ার মেসোস্ফিয়ার এর উপরের স্তর 80-600 km  i) ধনাত্বক ও ঋনাত্বক তড়িৎগ্রস্থ কনা বা আয়ন থাকায় একে আয়নোস্ফিয়ার বলে ।

ii) 90-160 km কে কেনেলি – হেভিসাইড স্তর বলে ।

iii) এই স্তরে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয় ।

iv) সুমেরু ও কুমেরু প্রভা মেরুজ্যোতি দেখা যায় ।

v) 200km তে 700°C এবং সবশেষে 1200°C হয় ।

vi) x-ray শোষণ করে ।

vii) 480 km তে তাপ বাড়েও না কমেও না তাই একে সমতাপ অঞ্চল বলে ।

viii) 150-380 km স্তরের F স্তর কে অ্যাপেলের স্তর বলে । (1947 সালে এডওয়ার্ড অ্যাপেলটন)

 এক্সোস্ফিয়ার বা বহিঃমণ্ডল

উষ্ণতম স্তর

থার্মোস্ফিয়ারের উপরের স্তর 600-1500 km i) এই স্তরের উষ্ণতা 1200°C – 1600°C

ii) বায়বীয় কনাগুলি মহাশূন্যে বিলিন হয়ে যায় ।

iii) কৃত্রিম উপগ্রহের কক্ষপথ ।

ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বা চৌম্বকমণ্ডল  এক্সোস্ফিয়ারের পরবর্তী স্তর 1500- 10000km  i) বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ যে স্তরে চৌম্বকক্ষেত্র তাকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে । যে অংশে পার্থিব চৌম্বকক্ষেত্র থেমে যায় তাকে ম্যাগনেটোপজ বলে ।

ii) এই স্তরকে ভ্যান অ্যালেন বিকিরন বলয় বলে । (দুটি ঘন বলয়যুক্ত ম্যাগনেটোপজকে)

 

0 0 votes
Article Rating
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments